টাকার ঝুড়ি নিয়ে চীনের আগ্রাসী-সাশ্রয়ী প্রস্তাব, আমরা কী করব?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২২, ০২:৫৫ পিএম

টাকার ঝুড়ি নিয়ে চীনের আগ্রাসী-সাশ্রয়ী প্রস্তাব, আমরা কী করব?

বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রত্যাশা পূরণে অন্য  দেশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যখন ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, ঠিক তখনি টাকার ঝুড়ি নিয়ে আগ্রামী ও সাশ্রয়ী প্রস্তাব নিয়েছে এসেছে চীন। এখন বিষয় হলো, আমরা কী করব?

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে কোয়াডের সদস্য দেশগুলোতে ‘চীনা ঋণের টোপ’ নিয়ে বিতর্ক চলার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ প্রশ্ন তোলেন।

গত শুক্রবার তিন দিনব্যাপী মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে  শনিবার রাতে প্যানেল আলোচনার বিষয় ছিল ‘ইন্দো-প্যাসিফিকে আঞ্চলিক ব্যবস্থা ও নিরাপত্তায় বড় পরিবর্তন’। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এশিয়া-প্যাসিফিক বিষয়ক সিনিয়র ফেলো লিন কিউক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

আলোচনায় অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের ইউরোপ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বিষয়ক সাবকমিটির চেয়ারওম্যান সিনেটর জিনি শাহিন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্কর, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরিস পেইন ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হায়াশি ইয়োশিমাসা। এই চার দেশ কোয়াডের সদস্য।

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ভালো করছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এক পর্যায়ে বলেন, “দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাও বেড়ে গেছে। তারা আরো উন্নত জীবন, সুযোগ-সুবিধা ও অবকাঠামো চায়। কিন্তু বাংলাদেশের যথেষ্ট টাকা ও প্রযুক্তি নেই।” অবকাঠামো উন্নয়নে সহযোগিতা ও ঋণের জন্য জাপান ও ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “বিকল্প হিসেবে টাকার ঝুড়ি নিয়ে এগিয়ে এসেছে চীন। তারা আগ্রাসী ও সাশ্রয়ী প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। এখন বিষয় হলো—আমরা কী করব?”

ড. এ কে আব্দুল মোমেন আরও বলেন “আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরো তহবিল প্রয়োজন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা অনেক জটিলতা নিয়ে আসে এবং এটি গ্রহণ করা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সম্মেলনে উপস্থিত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোন দেশ কার কাছ থেকে বিনিয়োগ নেবে, তা ওই দেশের স্বার্থেই বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগ গ্রহণকারী দেশ কী পাচ্ছে, তা জেনেবুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘দেশগুলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থের ব্যাপারে বিচক্ষণ হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, তারা আসলে কী পেতে যাচ্ছে। আমাদের অঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে আমরা ঋণে জর্জরিত দেশ দেখতে পাচ্ছি। আমরা এমন প্রকল্প দেখেছি, যেখানে টেকসই নয় এমন বাণিজ্যিক বিমানবন্দর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ফ্লাইট আসে না। আমরা এমন পোতাশ্রয় নির্মাণ হতে দেখছি, যেখানে জাহাজ ভেড়ে না। ’

জয়শঙ্কর বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, কী পাচ্ছি, তা নিজেকে জিজ্ঞেস করাটা ন্যায়সংগত হবে। ’ তিনি বলেন, অবশ্যই নিজেদের স্বার্থে দেশগুলোকে বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। এতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও স্বার্থ আছে। কারণ টেকসই নয় এমন প্রকল্পের খারাপ দিক অনেক। ঋণের পর ‘ইকুইটি’র প্রশ্ন আছে, যা সত্যিকারের উদ্বেগের কারণ। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক সিদ্ধান্ত জেনেবুঝে নেওয়া আমাদের সবার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ’

মিউনিখ সম্মেলনের শেষ দিন ছিল গতকিাল রবিবার।এবারের সম্মেলনের মুল আলোচনা বিষয় হয়ে উঠে ইউক্রেন সংকট।  

Link copied!