পদ্মা সেতুর পিলারে ফেরির ধাক্কা এড়াতে বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি ঘাট স্থানান্তর না হওয়া পর্যন্ত বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ফেরি চলাচলের পথে পদ্মা সেতু এলাকা এড়ানোর জন্য বাংলাবাজার ঘাট স্থানান্তরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। এই ঘাটটি শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দি ঘাটে নেওয়া হবে। এতে এক থেকে দেড় মাস সময় লাগবে।
চার দিনের ব্যবধানে শুক্রবার সকাল পৌনে সাতটার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া যাওয়ার পথে পদ্মা সেতুর ১০ নম্বর পিলারে কাকলী নামের একটি ফেরির ধাক্কা লাগে।
এ বিষয়ে ফেরিটির চালক জানান, ফেরিটি পদ্মা সেতুর ১১-১২ পিলারের মধ্য দিয়ে আসার কথা। কিন্তু নদীর প্রচণ্ড স্রোত ও বাতাসের কারনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ১০ নম্বর পিলারে গিয়ে ধাক্কা লাগে। এতে ফেরিটির র্যাম্পের সামান্য ক্ষতি হয়। এছাড়া আর কিছু হয়নি।
তার দাবি, এ ঘটনায় পদ্মা সেতুর পিলারেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। ধাক্কা লাগার পর ফেরিটি চালিয়ে নিরাপদে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছানো গেছে। কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এ ঘটনায় সকালে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হালকা আঘাত লাগলেও আমরা এটাকে হালকাভাবে দেখছি না। চালকদের দায়িত্বে উদাসীনতার কারণগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পদ্মা সেতু পুরোপরি চালু হলে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটের বাঁধ রক্ষায় শরীয়তপুরের জাজিরায় মাঝিরকান্দিতে ফেরিঘাট স্থানান্তরের বিষয়টি পরিকল্পনায় রয়েছে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম, বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক এবং পদ্মা সেতুর নিরাপত্তার ব্রিগেড প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কামরুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
এ নিয়ে গত জুলাই ও আগস্টে পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে চারবার ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা ঘটল।
এর আগে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাওড়াকান্দি ঘাট সরিয়ে কাঁঠালবাড়িতে আনা হয়। এর তিন বছর পর ২০২০ সালের নভেম্বরে নাব্যতা সংকট ও পদ্মা সেতুর নদী শাসনের জন্য কাঁঠালবাড়ি ঘাটটি সরিয়ে বাংলাবাজার এলাকায় স্থানান্তর করা হয়।
সেনাবাহিনী সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুলাই ও আগস্ট মাসে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে চলাচলকারী তিনটি ফেরির ধাক্কায় পদ্মাসেতুর ১০, ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বারবার পিলারে ধাক্কার ঘটনা উদ্বেগজনক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এবার নিরাপত্তার জন্য সেতুর পিলারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। সাথে পিলার ও ফেরিগুলোর চারপাশে রাবারের টায়ার লাগানো হবে। এ নৌপথে চলাচলকারী ফেরিগুলোতে দুই জন সেনা সদস্য থাকবে।
এর আগেও তিন বার বাংলাবাজার ঘাট থেকে আসার পথে পদ্মা সেতুর পিলারে আঘাত করে ফেরি। গত ২০ ও ২৩ জুলাই ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারে এবং ৯ আগস্ট ১০ নম্বর পিলারে আঘাত করে। এসব ঘটনায় থানায় জিডি, তদন্ত কমিটি গঠন ও ফেরিচালকদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।