চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েং ই’র বিশেষ আমন্ত্রণে তাৎপর্যপূর্ণ এক সফরে বেইজিং যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'চীন যাবো, উনারা আমাকে দাওয়াত দিয়েছেন, আমি গ্রহণ করেছি। এখন সময় এবং সুযোগের অপেক্ষায় আছি।' তবে সফরের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি। উভয় পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে তারিখ চূড়ান্ত করা হবে। এটি পূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সফর হবে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে উজবেকিস্তান সফরকালে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েং ই’র সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের। এই বৈঠকেই চীন সফরের আমন্ত্রণ পান তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা অবশ্য বলছেন, এটা রুটিন দাওয়াত। ভদ্রতাবশত তা গ্রহণ করতে হয়। মন্ত্রী হয়তো চীন সফরে যাবেন, কিন্তু এটা সহসাই হচ্ছে এমন কোন নির্দেশনা এখনো ডেস্ক লেভেলে পৌঁছায়নি। সেগুনবাগিচায় চীন-জাপানসহ ইস্ট এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন মন্ত্রী মোমেন।
আসিয়ান জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বিশেষ বৈঠকে বসছে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র চীন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েং ই ওই বৈঠকের উদ্যোক্তা। তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এতে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মন্ত্রী মোমেনও বৈঠকে যোগদানে আগ্রহী। তাছাড়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন তরান্বিত করতে দু’এক মাসের মধ্যে চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি বৈঠক হতে পারে। ত্রিদেশীয় ওই রুটিন বৈঠকটি করোনা এবং মিয়ানমার পরিস্থিতির কারণে ঝুলে আছে দেড় বছর ধরে। দ্রুত বৈঠকটি আয়োজনে তাগিদ দিয়ে চলেছে ঢাকা। তাসখন্দ বৈঠকে বেইজিংয়ে ফিজিক্যালি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও চীন। এখন মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের ইতিবাচক সাড়ার অপেক্ষায় দুই দেশ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাসখন্দে সদ্য সমাপ্ত কানেক্টিভিটি সম্মেলনের সাইড লাইনে দুই মন্ত্রীর একান্ত এবং আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়াদির পাশাপাশি ত্রিপক্ষীয় আলোচনা পুনরায় চালুর তাগিদ দেন মন্ত্রী। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেও একমত হন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব রয়েছে এবং এই প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য পুনরায় অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির শতবছরপূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিডিও বার্তা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীর উৎসবে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ভিডিও বার্তা প্রদানের জন্য পারস্পরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ঢাকার এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রী পর্যায়ের ওই বৈঠকে দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারিত্ব কীভাবে আরও দৃঢ় করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মহামারির এই কঠিন সময়ে টিকা উপহার দিয়ে ও বাণিজ্যিকভাবে সরবরাহ করে চীন বাংলাদেশের পাশে শক্তভাবে দাঁড়ানোর জন্য দেশটির সরকার এবং জনগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মন্ত্রী মোমেন। বাংলাদেশে চীনা টিকার যৌথ উৎপাদন শুরু করতেও অনুরোধ করেন তিনি। এ বিষয়ে চীন সরকারের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন ওয়েং ই।
চীনের উদ্যোগে ৬ জাতি রাষ্ট্রের মধ্যকার কোভিড কনসালটেশন এবং তাতে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার জন্য চীনের প্রতি ধন্যবাদ জানান মন্ত্রী মোমেন। স্মরণ করা যায়, চীন থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার চুক্তি হয়েছে। ইতিমধ্যে ২০ লাখ টিকা হস্তান্তর করেছে। এ ছাড়াও চীন ১১ লাখ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত উপহার হিসেবে প্রাপ্ত ও ক্রয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩ কোটি টিকা সংগ্রহ করতে পেরেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।