ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৩, ১১:৫১ এএম
বাংলাদেশের ইতিহাসে বেদনাদায়ক পিলখানা ট্রাজেডি দিবস আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দাবি-দাওয়া আদায়ের নামে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) বিপথগামী জওয়ানদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বিডিআর প্রধানসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। এ ঘটনায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে হত্যা মামলার রায় হলেও এখনও আপিল বিভাগে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে। আর, বিস্ফোরক আইনে করা অপর মামলাটির তেমন কোনো অগ্রগতিই হয়নি বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আলাদা দুটি মামলার বিচার একসাথে শুরু হয়। হত্যা মামলার বিচার বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে শেষ হওয়ার পর এখন অপেক্ষা করতে হচ্ছে আপিল বিভাগে চূড়ান্ত আইনি লড়াইয়ের। তবে ১৪ বছর পার হলেও নিম্ন আদালতে দায়ের করা বিস্ফোরক আইনের মামলাটির কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে। একারণে হত্যা ও বিদ্রোহ মামলায় খালাস পেলেও কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না, দুই শতাধিক আসামি। এ মামলায় আপিল শুনানির জন্য ফের বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে দ্রুত চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “ট্রায়াল কোর্ট, হাইকোর্ট ডিভিশনে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার যেভাবে হয়েছে; আমার মনে হয় আপিল ডিভিশনেও একটা বেঞ্চ হওয়া দরকার। বেঞ্চ গঠন করা ছাড়া এটিও শুনানির আর কোনো উপায় আছে কী না-এটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে এটা মাননীয় প্রধান বিচারপতির বিবেচনার ওপর নির্ভর করে।”
অন্যদিকে, রাস্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) এ এম আমিন উদ্দিন বলছেন, রাষ্ট্রপক্ষচলতি বছর আপিল শুনানি শুরু করবে। ২০২৩ সালেই মামলাটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, পিলখানা হত্যাযজ্ঞের পর বাহিনীর নিজস্ব আইনে বিচারে দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। হত্যামামলায় নিম্ন আদালতে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং আরো ৪২৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়। ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখা হয়। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন ও চারজনকে খালাস দেয়া হয়। নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখেন আদালত।
হাইকোর্টে আপিল চলার সময়ে কারাগারে থাকা অবস্থায় দুজনের মৃত্যু হয়। খালাস পান ১২ জন আসামি। নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ যে আপিল করেছিল তাদের মধ্যে ৩১ জনকে হাইকোর্ট যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এছাড়া ৭ বছর করে চারজনকে কারাদণ্ড এবং ৩৪ জনের খালাসের রায় বহাল রাখা হয়।
এই মামলার সাড়ে ৮০০ আসামির মধ্যে আদালত আরো ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। তাদের মধ্যে ১৮২ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, আটজনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড, চারজনকে ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং ২৯ জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। বিভাগীয় মামলায় চাকরিচ্যুতসহ সাজা পায় অনেকে।