বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবির কপিরাইট (স্বত্ত্ব) কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাবি করতে পারবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। কপিরাইট থাকবে বাংলাদেশের জনগণের এবং রাষ্ট্রের অধিকারে।
মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
আদালতে রিটকারী আইনজীবী সায়েদুল হক সুমনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অনিক আর হক। আর সাংবাদিক নাজমুলের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য বঙ্গবন্ধুর নামে প্রকাশিত দুটি বইয়ে অবৈধভাবে গ্রন্থস্বত্ত্ব এবং মেধাস্বত্ত্বের অধিকার ব্যবহারের চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে হাইকোর্টে ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট এ রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। এ বিষয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন রিটে যুক্ত করা হয়েছে।
পরে হাইকোর্ট রুল জারি করে তদন্তের নির্দেশ দেন। ওই রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে মঙ্গলবার রুল নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণসহ এ রায় দেন আদালত।
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা দুটি বইয়ের কপিরাইট নিয়ে মামলা হয়েছিল। আদালত বলেছেন, এ পর্যন্ত এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো আইন বা বিধান ছিল না। বঙ্গবন্ধুর ছবি এবং মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত ছবি এ ছাড়া স্বাধীনতার ঐতিহাসিক যে ছবিগুলা থাকবে, সেই ছবিগুলো কীভাবে ব্যবহার হবে। শুধুমাত্র এই দুটি বই না, আরও বিভিন্ন বইয়ে এই ছবিগুলো ব্যবহার হয়েছে এবং বইয়ে কপিরাইট যারা পাবলিশ করেছে তাদের নামে হয়েছে। ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এবং মুক্তিযুদ্ধ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে। সেই ছবিগুলোর কপিরাইট আমরা দাবি করবো না। কিন্তু বইয়ের যে কপিরাইট আমাদের থাকবে এটা আদালতের পর্যবেক্ষণ।
তিনি আরও বলেন, আজকে একটি ঐতিহাসিক বিষয়, বঙ্গবন্ধুর পিকটোরিয়াল ও ইমেজেস এবং স্বাধীনতার যুদ্ধকালীন ছবি এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ছবি দিয়ে যতগুলো বই প্রকাশ হবে, তার কপিরাইট রাষ্ট্রের থাকবে। এটা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দাবি করতে পারবে না।
আইনজীবী অনিক আর হক বলেন, যে বইগুলো এরই মধ্যে প্রকাশ করা হয়ছে সেগুলা আবার সংগ্রহ করে প্রত্যেকটাতে লিখে দেওয়া হবে ব্যবহৃত ছবির স্বত্ত্ব প্রকাশকের নয়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মুজিববর্ষে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’র জন্য আটটি বই কেনার প্রক্রিয়া শেষ হয়। তার মধ্যে তিনটি বই নিয়ে জালিয়াতি করার অভিযোগ উঠেছে নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে। ‘বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা’ এবং ‘৩০৫৩ দিন’ বইটির পাশাপাশি অধ্যাপক নাসরিন আহমদ সম্পাদিত ‘অমর শেখ রাসেল’ বইটিরও মেধাস্বত্ত্ব চুরি করে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠে ‘জার্নি মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড’ ও ‘স্বাধীকা পাবলিশার্স’ নামে দুটি প্রকাশনা সংস্থার মালিক এই নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে।
আইনজীবী সুমন বলেন, “অবাক করা বিষয় হলো এই দুর্নীতি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নামের বই দিয়ে। এই বই বিক্রি করা হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কাছে এবং বইটি ছাড় দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়।"
এর আগে, বঙ্গবন্ধুর নামে বইয়ের মেধাস্বত্ত্ব চুরি ও গ্রন্থস্বত্ত্ব জালিয়াতির ঘটনায় সাংবাদিক নাজমুল হোসেনের বিরুদ্ধে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে গত বছরের ৩১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।