বর্ষীয়ান সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও কলাম লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরীর কলম থেমে গেল ৮৮ বছর বয়সে। লন্ডনের একটি হাসপাতালে তিনি প্রয়াত হলেন। বাঙালির কাছে আবদুল গাফফার চৌধুরী এক সুপরিচিত নাম। রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে তাঁর লেখা মন্তব্য প্রতিবেদন নিয়মিতই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। তাঁর অন্যতম সৃষ্টি একটি কবিতা যেটি পরে গানে রূপান্তরিত হয়। যে গান তাঁকে অমর করে রেখেছে। সেই কবিতাটি হল, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফ্রেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’
হাসপাতালের বেডে বসেই লিখেছিলেন অমর রচনা
দেখুন ভিডিওতে
এই কবিতা গাফফার চৌধুরী লিখেছিলেন ১৯৫২ সালে। দেশে তখন ভাষা আন্দোলন চলছে, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাস্তায় তখন আপামর জনতা। ২১শে ফেব্রুয়ারি গুলি চলে সেই আন্দোলনে। প্রাণ হারান রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতরা। সেইদিনের সাক্ষী ছিলেন গাফফার চৌধুরী। যাপিত জীবনে তিনি যদি আর কোনো কিছুও না করতেন, এই কবিতাটিই তাঁকে অমর করে রাখার জন্য যথেষ্ট।
প্রায় এক দশক আগে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে আব্দুল গাফফার চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘সে সময় বাংলাদেশ আন্দোলনমুখর ছিল। কেন না, ভাষা আন্দোলন তো ৫২ সালে শুরু হয়নি, ১৯৪৮ সালেই শুরু হয়। যখন মি. জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন, তারপর এই আন্দোলন গড়াতে গড়াতে ৫২ সালে এসে রক্তাক্ত এক অধ্যায়ের সূচনা করে।''
গাফফার চৌধুরী শহিদ রফিকের মরদেহও দেখেছিলেন সেদিন। পুলিশের গুলিতে রফিকের মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল। ৫২'র ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহিদ ছিলেন তিনি। কী দেখেছিলেন সেদিন গাফফার চৌধুরী? সে সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী গাফফার চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি আরো দু'জন বন্ধু নিয়ে গিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজের আউটডোর কক্ষে। সেখানে বারান্দায় শহিদ রফিকের লাশ ছিল। মাথার খুলিটা তাঁর উড়ে গেছে। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তখন ছাত্র। তিনি তাঁর ক্যামেরায় রফিকের ছবি তোলেন।''
রফিকের মরদেহ দেখে গাফফার চৌধুরীর মনে নিদারুন বিষাদ ভর করে সেদিন। যেন তাঁর নিজের ভাইয়ের লাশই পড়ে আছে তাঁর সামনে। তখনই তাঁর মনে গুনগুনিয়ে ওঠে অমর সেই কবিতা: ‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি।'' সেই কবিতা পরবর্তীতে গানেও রূপ নেয়।
গাফফার চৌধুরি সেই গান প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই কবিতায় প্রথমে আব্দুল লতিফ সুর দেন। তারপরে আলতাফ মাহমুদ সুর দেন। আলতাফের সুরেই এটা প্রভাত ফেরির গান রূপে গৃহীত হয়।''