২০১৩ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সাক্ষরিত বন্দি প্রত্যাপর্ণ চুক্তি অনুযায়ী, বন্দী ফেরত আনতে হলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে বন্দীকে প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানায়। এরপর আদালতের কাছে সেই বন্দীকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয়। আদালত অনুমতি দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ সেই বন্দীকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে বৈঠকের মাধ্যমে বন্দী হস্তান্তর করে। বিজিবির কাছ থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রহণ করে আদালতে হাজির করে বিচারের মুখোমুখি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে আইনি পথে দেশে ফেরানোর আশা করছেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টরা। তবে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে দেশে ফেরাতে অন্তত তিন মাস লাগতে পারে বলে ধারণা করছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীরা।
অবৈধভাবে নাগরিকত্ব নেয়ার অভিযোগে ভারতে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলে তা সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখানকার আর্থিক খাত থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর কয়েক বছর ধরে পলাতক ছিলেন তিনি।
শনিবার পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-ইডি। সেসময় তাকেসহ ছয়জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে তার স্ত্রীও রয়েছেন। ঢাকার একটি ব্যাংক ও অপর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে। এরপর দীর্ঘদিন ধরেই পলাতক ছিলেন তিনি। পি কে হালদার এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৪টি মামলা করে দুদক।
পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করার কথা জানিয়েছেন প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, দুদক ও ফিনান্সিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। দেশের সংস্থাগুলো তৎপর ও সজাগ আছে। এজেন্সিগুলো কাজ করছে। অচিরেই তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের সম্মুখীন করা হবে।
অবৈধভাবে ভারতের পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছেন বলেও পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। দেশটির আইন অনুযায়ী এটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে সেখানে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘ভারতের আইনে জাল-জালিয়াতির কারণে পি কে হালদারের বিচার হবে। সে মিথ্যা নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট গ্রহণ করেছে। সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আর আমাদের এখানে তার বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির মামলাগুলো বিচারাধীন। সেগুলোর বিচারের জন্য তাকে আনতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আশা করি, দ্রুত তাকে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি ছিল। রবিবার বৌদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি থাকায় দপ্তরগুলো বন্ধ ছিলো। ফলে পি কে হালদার গ্রেপ্তার হলেও সেই বিষয়ে এখনো দেশে কোনও কর্মকাণ্ড শুরু হয়নি। সোমবার এই নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘এখনো আমাদের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনও কাগজপত্র আসেনি। পি কে হালদার এখানে অনেক মামলার আসামি। আমরা ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়েছিলাম। অফিসিয়াল কাগজপত্র পাওয়ার পর আমরা আইনগত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব। উনি ভারতে আইনের মুখোমুখি হতে পারেন। আমরাও তাকে ফেরত চাইব।’ পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল।