দুবাইয়ে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে একটি সোনার দোকান উদ্বোধন করতে গিয়ে বেশ আলোচনায় এসেছেন বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডার তথা বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দোকানটির মালিক আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে সোহাগ মোল্লা হলেন পুলিশ কর্মকর্তা খুনের আসামি! এ ঘটনা নিয়ে যখন দেশে তোলপাড় চলছে, সেই সময় সাকিবের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।
বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ-ভারত সিরিজ চলাকালে হোটেল সোনারগাঁওয়ে পুলিশ ও বিসিসি কর্মকর্তাদের সামনে সাকিব তাকে মারতে যান। ওই ভিডি বার্তায় সাকিবের ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, “অনুরোধ করব তারে বলেন, দিনে ৮-১০ ঘণ্টা ক্রিকেটের পেছনে সময় দিয়ে ভালো ক্রিকেটার হওয়ার সাথে এক ঘণ্টা সময় দিয়ে ভালো মানুষ হোক।”
https://www.facebook.com/100045045016115/videos/571767231568636/
দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের পাঠকদের কাছে ব্যারিস্টার সুমনের ওই ভিডিও বার্তাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“সাকিব আল হাসান আমাদের নামীদামী ক্রিকেটার, যাকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। উনি একটা স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করার জন্য চলে গেছেন দুবাইয়ে। সেলিব্রেটি যারা আছেন, তাদের কেউ দাওয়াত দিলে যেতেই পারি। আমি সাকিব আল হাসানের কোনো দোষ এই পর্যন্ত দেখি না। কিন্তু যখন জানতে পারলাম ডিবির পক্ষ থেকে, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ পুলিশের পক্ষ থেকে সাকিবকে জানানো হয়েছিল, "আপনি যার দোকান উদ্বোধন করতে যাচ্ছে সে একজন পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার আসামি। সে পলাতক অবস্থায় আছে এবং ইন্টারপোলের সাহায্যে তাকে ধরে আনার চেষ্টা করছি। আপনি তার দোকান উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন।" তারপরও সাকিব আল হাসান শোনেন নাই।
আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা যে একটা অপরাধ উনি জানেন কিনা। সেলিব্রেটি হলে কি তার কোনো অপরাধের বিচার হবে না? সাকিব আল হাসানের ভক্তদের প্রতি সম্মান রেখে একটা কথা বলতে চাই, কিছুদিন আগে একটা ভিডিওতে তাকে অনুরোধ করেছিলাম, সে যেন জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত না হওয়ার জন্য বলেছিলাম, প্রয়োজনে তিন লাখ টাকা দিব। সাকিব আল হাসান এমন একজন মানুষ যিনি সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না।
কিছুদিন আগে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আমি দেখি নাই, তিনি হঠাৎ করে আমাকে সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ আর ভারতের মধ্যে যে ক্রিকেট ম্যাচ ছিল, ওই সময় আমাকে দেখে সে পুলিশ এবং বিসিবির কর্মকর্তাদের সামনে আমাকে মারতে এসেছিল! আমেরিকার কিছু লোকজন সেখানে ছিল, যাদের সঙ্গে দেখা করতে আমি গিয়েছিলাম। তাদের সামনে সে সবাইকে ইগনোর করে আমাকে মারতে আসছিল। আমি কিছু বলি নাই। পুলিশরা এসে আমাকে বলল- "বাদ দেন ভাই। সে সেলিব্রেটি। তার কথা বলে লাভ নাই।' আমিও মনে করেছিলাম, যাক সেলিব্রেটি মানুষ, তার যদি কিছু অপরাধ করে আমি মাইরও খাই, আপনাদের কাছে বিচার দেব?
তারপরও আমি কিছু বলি নাই। কিন্তু আজ আমার কাছে মনে হয়েছে, জুয়া থেকে শুরু করে তার এই দুবাইতে উদ্বোধন করা পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয়েছে যে- বিদ্বান যদি খারাপ মানুষ হয়, তাহলে পরিতাজ্য। সে যতই কোয়ালিফায়েড লোক হোক, যদি মানুষ হিসেবে ভালো না হয়, তাহলে তার ভক্ত হওয়ার সুযোগ নাই।
একটা কথা বলতে চাই, সাধারণ মানুষ যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হয়, সাকিব আল হাসানের মতো লোকেরা বাংলাদেশের মানুষকে শুধু টাকার জন্য যদি এই ধরনের মেসেজ দেয়, তাহলে বাংলাদেশকে আপনি কখনই সোনার বাংলা বানাতে পারবেন না। কারণ ভালো ফুটবল খেলে, ভালো ক্রিকেট খেলে এমন একটা মানুষ যদি দেশ বিক্রি করে দিতে চিন্তা না করে, এই ধরনের জিনিস যে করতে পারে, তাহলে তাকে দিয়ে দেশের ভালো কিছু হতে পারে না।
যেদিন সে আমারে মারতে আসছিল, আমি কাউকে বলি নাই। ভাবছিলাম, থাকুক। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি। ভাবলাম, বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন হয়েও সে যদি বেয়াদব হয়, তাহলে বিচার দেওয়ার জায়গা থাকে না। আজ আমার মনে হয়েছে, দু-এক কথা বলা দরকার। তাকে যারা ফলো করেন, যারা তার ভক্ত তাদেরকে একটা অনুরোধ করব তারে বলেন, দিনে ৮-১০ ঘণ্টা ক্রিকেটের পেছনে সময় দিয়ে ভালো ক্রিকেটার হওয়ার সাথে এক ঘণ্টা সময় দিয়ে ভালো মানুষ হোক। এই ধরনের মানুষের বাংলাদেশে প্রয়োজন পড়ে না। আমি দাবি জানাব সরকারকে, তারে ঠিক করেন, তাকে মানুষ বানান। নাহলে সে এই ধরনের কাজ করতেই থাকবে।”