ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন আদম তমিজি হক

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩, ০২:৪১ এএম

ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন আদম তমিজি হক

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হক। ছবি: সংগৃহীত

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনলেন হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হক। আদম তমিজি হক ঢাকা মহানগর উত্তর তাঁতি লীগের প্রধান উপদেষ্টার পদেও রয়েছেন। তমিজি এক লাইভ পোস্টে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে ‘চোর’ সম্বোধন করেন এবং তার বিরুদ্ধে হক গ্রুপ কোম্পানি দখল করার চেষ্টার অভিযোগও করেন।  তমিজি হকের সেই ফেসবুক লাইভ ও স্ট্যাটাস নিয়ে এখন চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

শুক্রবার রাতে বিদেশে অবস্থানকালে আদম তমিজি হক তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে লাইভে এসে বলেন, ‘শুভ বিকেল, আমার কারখানা থেকে বেআইনিভাবে জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের বাবা একজন ভালো মানুষ ছিলেন, তিনি আমার বাবার বন্ধু। প্রতিমন্ত্রী রাসেল, তাঁর চাচা মতিউর রহমান মতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরু আমার প্রতিষ্ঠান থেকে বেআইনিভাবে টাকা পয়সা নিত। তাঁরা এ পর্যন্ত আমার ১ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে।’ 

প্রতিমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করে তমিজি হক বলেন, ‘তুই একটা চোর, বাটপার, তুই আমাকে চিনস। আমি টঙ্গীতে আসতেছি। সাহস থাকলে ঠেকা।’ 

ফেসবুক লাইভ ছাড়াও এক পোস্টে (ইংরেজিতে) আদম তমিজি হক লিখেছেন, ‘প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী, অনেকেই আপনারা এত দিন আমাকে “চুতিয়া” ভেবেছেন। প্রয়োজনে আজই আমি আমার ক্ষমতার আংশিক রূপ দেখাতে পারি। আমি বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতাসীন মন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে নামাতেও পারি। সুতরাং আমার সম্পত্তির দিকে হাত বাড়ানোর আগে খুব বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।’

আরেকটি পোস্টে আদম তমিজি হক নাম উল্লেখ না করে লিখেছেন, ‘প্রিয় নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী), আমি এবং আমার দ্বিতীয় স্ত্রী দুবাই থেকে ঢাকার পথে। বাকি পারিবারিক সদস্যরা আজকে রাতে রওনা করবে এবং সকালে পৌঁছাবে। এমপি রাসেল এবং তাঁর চাচার ভয়ানক থাবা থেকে আমরা আমাদের রিজিক বাঁচানোর লক্ষ্যে আসতেছি।’

তমিজি হক একটি লাইভে নিজের বাংলাদেশী পাসপোর্টে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতেও দেখা যায়। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা ছিলাম। আওয়ামী লীগ আমার এক হাজার কোটি টাকা মাইরা দিয়া আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাসানোর চেষ্টা করছে। এ কারণে আমি এদেশের নাগরিক থাকতে চাচ্ছি না। আমার ফ্যামিলির যদি কিছু হয়, আপনারা বুঝবেন কারা করছে।’

এর আগে গত বুধবার রাতে টঙ্গীর হিমারদীঘি এলাকার হক গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের (হক বিস্কুট) কারখানার ভেতর কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান রুমেলকে পিটিয়ে আহত করা হয়। অভিযোগ ওঠে অপর এক কর্মকর্তা ইশান খানের বিরুদ্ধে। ঈশান খান কারখানাটির মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ঘটনার পর পুলিশের উপস্থিতিতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয় মুশফিকুর রহমানকে।

টঙ্গীতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এ ঘটনার পর থেকে। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল, ঝাড়ু মিছিল, মশাল মিছিল করেছে। কারখানার সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার তমিজি হক অভিযোগ করে বলেন, হক গ্রুপের কারখানা দখলের জন্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের চাচা মতিউর রহমান মতি এবং হক গ্রুপের বরখাস্তকৃত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রুমেল মিলে ষড়যন্ত্র করছেন। এ নিয়ে শনিবার দুপুরে টঙ্গীতে হক গ্রুপের কারখানায় সালিশি সভা এবং সংবাদ সম্মেলনের কথা জানালেও পরে তিনি টঙ্গীতে যাননি।

এ ঘটনায় আদম তমিজি হকের সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাংবাদিকরা। তবে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

অভিযোগের বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সাংবাদিকদের বলেছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। আমার ইমেজ নষ্ট করার জন্য এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমি ওই কারখানার বিষয়ে কিছুই জানি না। একটি গণমাধ্যমে সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে গাজীপুর-২ আসনে আমার নাম আসার পর থেকে একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। আমার, আমার পিতা ও আমার পরিবারের সুনাম নষ্ট করার জন্য। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমাকে জড়িয়ে যে সব অভিযোগ করা হয়েছে, তার সবই মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

জিএমপি টঙ্গী পুর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তানফিজুর রহমান বলেন, হক গ্রুপের কারখানার দুই ম্যানেজারের মধ্যে মারামারি হচ্ছে— এমন একটি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আহত অবস্থায় মুশফিকুর রহমানকে উদ্ধার করে স্ত্রীর জিম্মায় দেওয়া হয়। বিষয়টি কারখানার অভ্যন্তরীণ হওয়ায় তারা মালিকের সাথে আলোচনা করে অভিযোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Link copied!