কোটা আন্দোলনকে ‘রাজনৈতিক রূপ’ দেওয়ার চেষ্টা চলছে: ছাত্রলীগ

জাতীয় ডেস্ক

জুলাই ১১, ২০২৪, ০৮:৫০ এএম

কোটা আন্দোলনকে ‘রাজনৈতিক রূপ’ দেওয়ার চেষ্টা চলছে: ছাত্রলীগ

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

চলমান কোটা আন্দোলনকে ‘রাজনৈতিক রূপ’ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করছে ছাত্রলীগ। এই আন্দোলনকে ‘অনিঃশেষ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছে সংগঠনটি। প্রশ্ন তুলেছে, উচ্চআদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে কোটাবিরোধীরা কেন ‘অনিঃশেষ’ আন্দোলনে নেমেছে?

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত রাখা, জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ক্লাস ও পরীক্ষায় ফিরে আসা এবং কোটা ইস্যুর যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ইতিবাচক সমাধানের দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। এ সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ক্লাস ও পরীক্ষায় ফেরারও আহ্বান জানানো হয়।

ছাত্রলীগের ভাষ্য, আন্দোলনের নামে দেশের শিক্ষার্থী সমাজসহ শিক্ষাব্যবস্থাকে জিম্মি করে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ অভিমুখে অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার যেকোনও প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে তারা রুখে দাঁড়াবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কোটার বিষয়ে সবপক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে সরকারি চাকরিতে চলতি সময়ে আর কোনও কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত নেই। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে কোটা ব্যবস্থা তুলে দেওয়ায় নারীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যায়। যা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য অন্তরায় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কোটা উঠে যাওয়ার পর উন্নয়নের মূলধারা থেকে নারীরা ছিটকে পড়েছেন। অন্যদিকে জেলা কোটা না থাকায় বঞ্চিত দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। একইভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্যও এ কথা প্রযোজ্য। সরকারি চাকরির সব পরীক্ষায় একজন পরীক্ষার্থীকে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার (ভাইভা) সব ধাপ পেরিয়ে আসতে হয়। তাই ‘কোটা না মেধা’ শ্লোগানটি ‘ভিত্তিহীন, কল্পনাপ্রসূত ও উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা’। এখানে মেধার বিপরীতে মেধার প্রতিযোগিতায় সমাজের অনগ্রসর অংশকে কিছুটা এগিয়ে দেওয়া হয়, যা পুরোপুরি ন্যায় ও সংবিধানসম্মত।

এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল চেয়ে ১১ জুলাই বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে দেশব্যাপী ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি দেন শিক্ষার্থীরা।

গত ৭ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড‍‍’ নামে ঢাকা থেকে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথম দুই দিন অর্ধদিবস অবরোধ চলার পর মঙ্গলবার বিরতি দেওয়া হয় ও কোটা বাতিলের দাবিতে জনমত গঠনের লক্ষ্যে পালিত হয় গণসংযোগ কর্মসূচি।

২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের পর সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে পুরো কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছর ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন।

গত ৫ জুন রায় ঘোষণায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডে নিয়োগের বাধা দূর হয়। ওই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলাটিতে পক্ষভুক্ত হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ঢাবিসাস) সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া ও উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান আবেদন করেন। এরপর আজ (বৃহস্পতিবার) আপিল বিভাগ সরকারি চাকরিতে কোটা বহালে হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন।

Link copied!