বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান মিলে যৌথ অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ২৫, ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম

বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটান মিলে যৌথ অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানদক্ষিণ এশিয়ার এই চারটি দেশ মিলে একটি যৌথ অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারলে চার দেশই লাভবান হবে।

‘বাংলাদেশের শিল্পাঞ্চল গড়ে তুলতে এর কোনো বিকল্প নেই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নেপাল ও ভূটান আমাদের জলবিদ্যুৎ দিতে অত্যন্ত আগ্রহী, আমরাও নিতে আগ্রহী।”

মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের পণ্য, পৃথিবীর পণ্য। এই পণ্য নেপালে যাবে, ভুটানে যাবে, ভারতের সেভেন সিস্টার্সে যাবে। প্রতিবেশীদের পণ্য আমাদের এখানে আসবে, সারা পৃথিবীর কাছে পৌঁছে যাবে, এভাবেই এটি একটি লাভজনক অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবে। আর এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকবে বাংলাদেশ।”  

আমাদের এক বিস্তীর্ণ মহাসাগর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে আমাদের সামনে বিরাট অর্থনৈতিক সুযোগ এনে দিয়েছে। কুমিরা থেকে টেকনাফ পর্যন্ত দীর্ঘ উপকূল ভূমি। এই দীর্ঘ উপকূলজুড়ে বিরামহীনভাবে অনেকগুলি আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ আন্তর্জাতিক মানের সমুদ্র বন্দর, শিল্প কারখানা, রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা স্থাপন করা গেলে পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভবিষ্যৎ দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব।”

নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আনতে পারলে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমবে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, “বর্তমানে বিশ্ববাসী পরিবেশ রক্ষায় সচেতন। তারা এটাকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব বিকল্প পাওয়া গেলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করা যাবে।”

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ যথাসময়ে শেষ করার বিষয়ে সরকার জোর দিয়েছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমরা আসিয়ানের সদস্য হিসেবে যোগদান করার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানিয়েছি। এ বছরের শুরু থেকে মালয়েশিয়া আসিয়ানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। মালয়েশিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনি আমাদের আবেদনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, আমাকে মালয়েশিয়া সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি।”

মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিসংঘের সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব নিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে যাবার ব্যাপারে যে সমস্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল সবগুলো সমাধানের জন্য আন্তরিকভাবে তারা কাজ করছে।”

চীন সফর প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আগামীকাল চারদিনের সফরে আমি চীন যাচ্ছি। প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে আমার বৈঠক হবে। চীনের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সিইওদের সঙ্গেও বৈঠক করব।”

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ চাইনিজ সোলার প্যানেল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান লংজি বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ জানিয়েছে বলেও জানান প্রধান উপদেষ্টা।

এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা জানান, চীন সফরে প্রযুক্তিগত সহায়তা, মেডিকেল সহায়তা, স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হবে। চীন বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করতে চায় বলেও জানান তিনি।

চীন সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠতর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা।  

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা ২৫ শে মার্চ ‘কালরাতে’ পাক হানাদার বাহিনী নিরপরাধ, নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালির ওপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে যে হাজারো মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ ও দুই লাখ নির্যাতিত নারীর আত্মত্যাগের। মুক্তিযুদ্ধের এই বীরদের প্রতি সালাম জানান উপদেষ্টা।

সেইসঙ্গে চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত হাজারো শহীদ ও আহতদের প্রতিও সশ্রদ্ধ সালাম জানান তিনি।

Link copied!