সিলেটে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। পানি কমে যাওয়ায় প্রতিদিনই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজেদের ঘরে ফিরছেন মানুষ। বিভাগের চার জেলায় বন্যার পানি নামতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। ফলে নতুন করে চিন্তায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
বন্যাদুর্গত এলাকায় গত ৮ দিনে ডায়রিয়া, আরটিআই, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৮২৬ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যা ও পরবর্তী সময়ের কথা বিবেচনায় নিয়ে বিভাগজুড়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩৯৪টি মেডিকেল টিম।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মজয় দত্ত বলেন, “বন্যা-পরবর্তী পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। ইউনিয়নভিত্তিক টিমও কাজ করছে।”
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা বলেন, “বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক সুধীন চন্দ্র দাস জানান, “বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ ডায়রিয়া, জন্ডিস, চর্মরোগ এবং টাইফয়েডসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকিতে আছেন। তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
অপরদিকে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বুধবারের (২৬ জুন) দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিটি পয়েন্টে ৩ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি কমেছে।
সিলেট নগরীর ২৫০ কিলোমিটার রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলায় আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ায় ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।
জেলার মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বন্যায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২১ হাজার ১১১টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। তবে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।