গুমের দুই মামলায় ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৮, ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম

গুমের দুই মামলায় ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিরোধী মতের লোকদের গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

দুই মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দুটি দাখিল করা হয় বলে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান।

গুম করে র‌্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশনের (টিএফআই) গোপন সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে সেখানে।

আর গুম করে ডিজিএফআইয়ের জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় আরেক মামলায় শেখ হাসিনা, তারিক সিদ্দিকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এ মামলাতেও মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

এছাড়া জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার রামপুরায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিজিবি কর্মকর্তাসহ চার জনের বিরুদ্ধে আরেকটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছে প্রসিকিউশন। সেখানে অভিযোগ আনা হয়েছে মোট ছয়টি।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিরোধী মতের বহু মানুষকে তুলে নিয়ে বিচার বহির্ভূতভাবে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখার অভিযোগ ওঠে, সেইসব বন্দিশালার প্রতীকী নাম রাখা হয় ‘আয়নাঘর’।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এসব ‘গুমের’ ঘটনা তদন্তে গতবছর অগাস্টে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে সরকার।

গত ডিসেম্বরে জমা দেওয়া কমিশনের প্রথম অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘গুমের নির্দেশদাতা’ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে কমিশনের তদন্তে।

এসব ঘটনায় হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথাও প্রতিবেদনে বলা হয়, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসান এবং আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে তাকা পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ও হারুন অর রশীদ।

এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর মধ্যে কার কী ভূমিকা ছিল, তা গত ৪ জুন জমা দেওয়া কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়।

সেখানে বলা হয়, গুমের বেশির ভাগ ঘটনাই ঘটেছে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে। গুমের শিকার ব্যক্তি, তার পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশ, র‌্যাব এবং পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকে ‘মূল অপরাধী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এর বাইরে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিদপ্তর ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ‘সত্যতা’ পাওয়ার কথা বলেছে কমিশন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই বিভিন্ন ‘ব্ল্যাক সাইট’ পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত হচ্ছে ‘আয়নাঘর’, যেখানে বন্দিদের সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে চরম নির্যাতন চালানো হত।

বিগত সরকারের আমলে ‘আয়নাঘর’ নামে কুখ্যাতি পাওয়া এরকম তিনটি গোপন বন্দিশালা গত ১২ ফেব্রুয়ারি ঘুরে দেখেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

গত ৩ জুলাই সেনা সদরের এক সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনীর যেসব সদস্য ডেপুটেশনে থাকেন, তারা সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে থাকেন না। ডেপুটেশনে থাকা কিছু সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর তদন্ত চলমান রয়েছে।

“এই তদন্তে যদি গুমের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তা হলে অবশ্যই সেনাবাহিনী তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে বাংলদেশ সেনাবাহিনী সব ধরনের সহযোগিতা করেছে এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা থাকবে।”

গুমের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত ২৫ অগাস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘গুম প্রতিরোধ, প্রতিকার ও সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

খসড়া অধ্যাদেশে গুমকে সজ্ঞায়ন ও শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। গোপন আটককেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবহারকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে গুম সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

Link copied!