জাতীয় সরকার ফর্মুলা বাস্তবায়নে ৩ নভেম্বর ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২০, ২০২৩, ০৯:১৮ পিএম

জাতীয় সরকার ফর্মুলা বাস্তবায়নে ৩ নভেম্বর ঢাকায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

জাতীয় সরকার ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির ফর্মুলা দিয়ে আসছে ইসলামী আন্দোলন। ছবি : দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ।

নির্বাচনের আগে জাতীয় সরকার ফর্মুলা বাস্তবায়নে  আগামী ৩ নভেম্বর ঢাকায় ‘মহাসমাবেশের’ ডাক দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের আমির চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। একই দাবিতে ২৭ অক্টোবর সারাদেশের সব জেলা ও মহানগরে মিছিলের কথাও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার বিকালে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ইসলামী যুব আন্দোলনের ‘ছাত্র ও যুব সমাবেশে’ এ ঘোষণা দেন তিনি।

ইসলামী আন্দোলনের অন্য দাবির মধ্যে আছে নির্বাচন কমিশন ‘বাতিল’ ও ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি’ প্রবর্তন, অর্থাৎ যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, তাদেরকে জাতীয় সংসদের তত শতাংশ আসন বরাদ্দ দেওয়া।

তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন ‘দিল্লি আছে তো আমরা আছি’ বলে দেওয়া বক্তব্যে প্রশ্ন আসে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা স্বীকার করেন কি না? সরকার দেশে উন্নয়নের কথা বলে সঠিক, কিন্তু নির্বাচন আয়োজনে ভয় পায় কেনো? বাংলাদেশের মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে উন্নয়ন হয়েছে, সরকারের বাবার টাকায় নয়। এ অবস্থায় আমরা বসে থাকলে চলবে না।

জাতীয় সরকার কি ?

বেশ কয়েকমাস ধরেই ইসলামী আন্দোলন জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবনা দিয়ে আসছে। জাতীয় সরকারের ধারনা ১৯৭১ সালে এই দেশে আগে। যদিও স্বাধীনতার পর নির্বাচনে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবনা দেয়া হলেও সেটি নাকচ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এরপর প্রতি নির্বাচনের আগেই এই ধরনের জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়। তবে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। দেশের দলগুলো অনেকে অনেক ফর্মুলা ব্যবহার করে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। তবে জাতীয় সরকারের ক্ষেত্রে কোন দেশের নিবন্ধিত ও আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের সমন্বয়ে সরকার গঠন করা বুঝায়।

গ্রেট ব্রিটেনে র্যামসে ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বে ১৯৩১-৩৫ সালের মেয়াদে এ রকম একটি সরকার গঠিত হয়েছিল। বর্ণবাদী ব্যবস্থা বিলোপের পর দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা যে সরকার গঠন করেছিলেন, তাকেও জাতীয় সরকার বলা যেতে পারে।

টানা আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

এদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ভোটাধিকার আদায় করে মান-সম্মান-ইজ্জত রক্ষায় সমাবেশে উপস্থিত হয়েছি। ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচন ডাকাতের নির্বাচন ছিল। উন্নয়নের নামে তারা মেগা, চুরি, ডাকাতি খুন করেছে। আবরারকে খুন করেছে। দেশকে লুটপাট করার ষড়যন্ত্র করেছে। আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করব। যখন আন্দোলনের আহ্বান আসবে তখনই আমাদের আন্দোলনের ময়দানে নামতে হবে। বিশ্রামের কোনো সময় নেই।

ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নুরুল হুদা ফয়েজী বলেন, যে কোনো ত্যাগ ও কুরবানির মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে এই সরকারকে। ক্ষমতাকে ধরে রেখে দিনের ভোট রাতে করেছে। দিল্লির ভয় দেখিয়ে দেশের মানুষকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। এই সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত ছাত্র যুবকদের ময়দানে থাকতে হবে।

দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষ পেটনীতি করে না, তারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। শিক্ষা সিলেবাসে নাস্তিকদের শিক্ষা প্রচলন করা হয়েছে। ইসলাম দেশ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার জন্য সরকারকে আহ্বান জানান।

অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, মানুষের জীবন চরম অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। ছাত্ররা যখন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে তখন অন্য একটি ছাত্র সংগঠন লুটপাট ও দুর্নীতি করে অর্থপাচার করছে। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে না দিলে এই সরকারের উন্নয়ন মানুষ গ্রহণ করবে না। অন্যান্য দেশে উন্নয়নে যে টাকা ব্যায় হয় শেখ হাসিনার আমলে তিন-চার গুণ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই টাকা কোথায় কীভাবে ব্যয় হয়েছে তা জনগণ জানতে চায়। ভবিষ্যতে যাতে আর এক দফার আন্দোলন করতে না হয় সেজন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ডিসি- ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার অর্থ কি তাদের প্রলোভন দেওয়া নয়? ১৩ থেকে ১৫ লাখ ভারতীয় কাজ করছে, কিন্তু আমার দেশের যুবকরা বেকার কেনো?

উপস্থিত ছিল বিএনপিও

এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিল বিএনপির প্রতিনিধিরাও। ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, এখন না দেখে আর সময় নাই। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না এটাই বাস্তবতা। তাই আগামীতে এক যোগে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পতন করা হবে।

জাতীয়তাবাদী যুব দল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু বলেন, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে যারাই আন্দোলন করবে তাদের স্বাগত জানাই। এই এক দফা আন্দোলনে যারা থাকবে তাদের নিয়েই আমরা জাতীয় সরকার গঠন করবো।

ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যে কোনো সময়ে বিস্ফোরণ ঘটবে। বাংলাদেশের মানুষ অবৈধ সরকার ও অবৈধ সংসদ দেখতে চায় না। তারা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। পীর সাহেব চরমোনাই জালিম সরকারকে নিরাপদে ক্ষমতা ছাড়ার জন্য জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইছেন। ওবায়দুল কাদেরের কথা অনুযায়ী ১৪ ও ১৮ সালের মতো এবারও সংবিধানের দোহাই দিয়ে মানুষের সাথে ধোঁকাবাজি করতে চায়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ক্ষমতাকে ব্যবহার না করে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে জালিম সরকারের পতন ঘটাতে চাই। প্রত্যেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত করতে হবে। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে ভোট দেওয়া যাবে না। ভোট দিতে হলে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ চত্বরে, বেলা ১১টায় শুরু হওয়া ছাত্র ও যুবসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মাওলানা ইছহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম।

 

Link copied!