জানুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০২:৩৫ পিএম
আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের কাজ শুরু করেছিল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ)। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের-বিজিবি পাশাপাশি স্থানীয়দের কড়া প্রতিবাদে পিছু হটে তারা। এবার সেই কাঁটাতারের বেড়ায় কাচের বোতল ঝুলিয়ে দিয়েছে বিএসএফ। খবর দ্য ডেইলি স্টার।
বিজিবি ও স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ১০ জানুয়ারি বিজিবিকে না জানিয়ে মুন্সিপাড়া সীমান্তের শূন্যরেখার প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে একলাইনের কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের কাজ শুরু করে বিএসএফ। পরদিন বিজিবি ও স্থানীয়দের বাধায় তারা কাজ বন্ধ রাখে। এর আগেই প্রায় ২৫০ মিটার বেড়া স্থাপন হয়ে যায়। বিজিবির পক্ষ থেকে সেই বেড়া সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও বিএসএফ তা করেনি। উল্টো ১৫ জানুয়ারি সকালে সেই বেড়ায় কাচের বোতল ঝুলিয়ে দেয়।
তবে কী কারণে কাঁটাতারের বেড়ায় কাচের বোতল ঝোলানো হয়েছে, বিএসএসএফ এখন পর্যন্ত তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি বলে জানিয়েছে বিজিবি।
ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ২২ দশমিক ৬৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছিটমহলের নাম দহগ্রাম। ১৯৮৫ সালে দহগ্রামকে একটি ইউনিয়ন ঘোষণা দিয়ে পাটগ্রাম উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। প্রায় ২০০ মিটারের তিনবিঘা করিডোর দিয়ে মুল ভূখণ্ডে যাতায়াত করেন দহগ্রামের বাসিন্দারা। বর্তমানে দহগ্রামের বাসিন্দা প্রায় ২২ হাজার। কৃষিকাজই জীবিকার একমাত্র উৎস।
দহগ্রামের কৃষক মহির উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিএসএফ শূন্যরেখার কাঁটাতারে কাচের বোতল ঝোলানোর পাশাপাশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে তারা আবারো বেড়া স্থাপনের কাজ শুরু করতে পারে। এসব ঘটনায় আমরা আতঙ্কে আছি। শূন্যরেখার জমিতে কাজে যেতে সাহস পাচ্ছি না।’
দহগ্রামের ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দহগ্রামের প্রবেশদ্বার তিনবিঘা করিডোর। আমরা এ করিডোর দিয়েই মূল ভূখণ্ডে যাতায়াত করি। শূন্যরেখায় বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন, বেড়ায় কাচের বোতল ঝুলিয়ে রাখা এবং টহল জোরদারের ঘটনায় আমাদের আতঙ্ক বেড়েছে।’
‘আমরা স্বাধীন ভূখণ্ডের নাগরিক, স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। এরকম আতঙ্কে থাকতে চাই না,’ বলেন তিনি।
এ বিষয়ে রংপুর ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক (এডি) আমীর খসরু সাংবাদিকদের জানান, বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের কাজ বন্ধ রেখেছে। তবে কাঁটাতারের বেড়ায় কাচের বোতল ঝুলিয়ে রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা এখনো কোনো জবাব দেয়নি।
ইতোমধ্যে শূন্যরেখায় স্থাপিত কাঁটাতারের বেড়া সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে বিএসএফকে। দহগ্রামবাসীর আতঙ্ক কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সীমান্তে বিজিবির টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিজিবি-বিএসএফের উচ্চপর্যায়ে বৈঠক ও সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত উভয় দেশই সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ থেকে বিরত থাকবে বলেও জানান তিনি।