হৃদরোগ বলতে সাধারণভাবে হৃৎপিণ্ড, ধমনী ও শিরা, মস্তিষ্ক ও বৃক্ক (কিডনি) সম্পর্কিত রোগকে বোঝায়। চলমান বিশ্বে হৃদরোগের ঝুঁকি ও হৃদরোগজনিত মৃত্যু ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপও বলছে একই কথা। ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২৩’-এর ফলাফল অনুসারে দেশে যে প্রধান দশটি কারণে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে তার মধ্যে শীর্ষস্থানেই আছে হৃদরোগ।
অন্যান্য তথ্য অনুসারে, দেশে প্রায় এক-পঞ্চমাংশ লোকই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অর্থাৎ প্রতি এক লাখ মৃত মানুষের মধ্যে ২০ হাজারই মারা যাচ্ছেন হৃদরোগে। বাকি ৮০ হাজার মারা যাচ্ছে দশ কিংবা তারও অধিক নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন-২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে। যার ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চরক্তচাপ। কেননা প্রতি চারজন ব্যক্তির একজন উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত।
আসুন জেনে নেওয়া যাক উচ্চরক্তচাপসহ হৃদরোগে আক্রান্তের অন্যতম ১০ কারণ:
১.হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হলো বয়স। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে সহজেই দেহের অভ্যন্তরে নানা জটিল রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।
২. নারীদের চেয়ে পুরুষেরা হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৩. হৃদরোগের আরেকটি কারণ হলো অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ নাগরিক সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অর্থাৎ কেনো না কোনো চাপে থাকেন। এর ফলে রক্তচাপের পরিমাণও স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। যা হৃদরোগে একটি প্রধান কারণ।
৪. মা-বাবার হৃদরোগ থাকলে তাদের সন্তানদেরও হৃদরোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি থাকে। এর মূল কারণ পরিবারের একই খাদ্যাভ্যাস ও ধূমপানাসক্তি।
৫. উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগ পরস্পর সহযোগী হিসেবে কাজ করে। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ হৃদপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
৬. রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বেড়ে গেলে হৃদরোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে।
৭. হৃদরোগ হওয়ার পেছনে ডায়াবেটিসের (বহুমূত্র) ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস থাকলে তা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
৮. অতিরিক্ত ওজনের কারণে রক্ত সরবরাহে হৃদপিণ্ডের বেশি কাজ করতে হয়। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৯. শারীরিকভবে নিষ্ক্রিয় লোকদের হৃদরোগের প্রবণতা দেখা যায়। আলস্য হৃদরোগের জন্য অন্যতম কারণ।
১০. হৃদরোগের পেছনে ধূমপানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি নিয়মিত ধূমপান করে থাকেন তার হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
হৃদরোগের ফলে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, তাহলে এর কী কোনো প্রতিকার ব্যবস্থা নেই, নাকি এটি একটি ভয়াবহ মরণব্যাধী। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৮০ ভাগই প্রতিকারযোগ্য। আসুন জেনে নিই কীভাবে আমরা হৃদরোগের মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে পারি।
১. হৃদরোগের প্রধান সহযোগী হচ্ছে ধূমপান ও মাদক সেবন। তাই ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকতে পারলে হৃদরোগের ঝুঁকি এড়ানো যাবে।
২. যথাসম্ভব নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখতে হবে। আশেপাশের মানুষের সঙ্গে সুন্দর ও সাবলীল ব্যবহারের মাধ্যমে এবং সর্বাবস্থায় নিজেকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৩. নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত হাঁটা-চলা ও শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৫. প্রচুর পরিমাণে সতেজ ও সবুজ শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।