জুলাই ২৯, ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো মামলা হয়নি, এ ঘটনায় কোনো আটক বা গ্রেপ্তার নেই।
শনিবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত দফায় দফায় হামলার পর মঙ্গলবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি সত্বেও মানুষজনের মধ্যে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ফের হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কার কথা বলেছেন বাড়িঘরে থাকা লোকজন। কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
যদিও উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে। এমন কোনো আশঙ্কা নেই।
হামলার পর থেকেই অনেক পরিবারের লোকজনই বাড়িঘর ছেড়ে যায়। মঙ্গলবার সকালে অনেককে বাড়িঘরে ফিরতে দেখা গেছে। তারা বাড়িঘর মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মামলা করার ব্যাপারে তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান বলেন, “আমরা পরিবারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তারা একটি অভিযোগ দেবে। অভিযোগ পেলেই মামলা নথিভুক্ত করা হবে।
কারা হামলা করেছে, তাদের শনাক্ত করা গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, “পাশের উপজেলার (নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা) লোকজন এসে হামলা করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফলে আমরা তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। যারা দায়ী, তাদেরই মামলার আসামি করা হবে।”
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে বাড়িঘর মেরামতের জন্য টিন, বাঁশ-কাঠ, মিস্ত্রি দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন। সকাল থেকেই সেই কাজের তদারকির জন্য ঘটনাস্থলে ছিলেন গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান মৃধা।
তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “মামলার বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন দেখছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এটি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা তাদের সব ধরনের সহায়তা করছি।”
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে শনিবার গ্রামের এক কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই কিশোরকে থানায় নেওয়ার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সেদিন সন্ধ্যায় পাশের এলাকা থেকে শতাধিক লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ছেলেটির গ্রামে প্রবেশ করে। তারা বাড়িঘরে হামলা চালায়।
‘উত্তেজিত জনতা’ শনিবার রাত ও রোববার বিকালে ওই কিশোরের বাড়িসহ ‘সনাতন ধর্মাবলম্বীদের’ বাড়িগুলোতে ভাঙচুর চালায়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এ ঘটনার পর সোমবার আতঙ্কে লোকজন বাড়ি ছেড়ে যায়। মঙ্গলবার থেকে তাদের কেউ কেউ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। তবে ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।