যুক্তরাজ্য ছাড়াও বিকল্প দেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আবেদন

সরকার অনুমতি দিলে যাতে দ্রুত খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া যায়, সে জন্যই এ প্রস্তুতি। ছবি : ফাইল ছবি

চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চেয়ে করা আবেদনে ইতিবাচক সাড়া মিলবে—এমনটাই ধরে নিয়ে চার দেশের হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যেরা। খালেদা জিয়ার পরিবারিক  সূত্র দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানিয়েছে, সরকার অনুমতি দিলে যাতে দ্রুত খালেদা জিয়াকে বাইরে নেওয়া যায়, সে জন্যই এ প্রস্তুতি।
 জিয়া পরিবারের এক সদস্য শুক্রবার বলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। তাঁরা খোঁজ নিয়েছেন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালে এর উন্নত চিকিৎসা আছে। তাই তাঁরা ওই দেশগুলোয় খালেদা জিয়ার জন্য উপযুক্ত হাসপাতালের সন্ধান করছেন, যাতে তাঁরা অনুমতি পাওয়ামাত্র অসুস্থ খালেদা জিয়াকে বাইরে নিতে পারেন।
গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেক দিন ধরে তাঁর লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে মেডিকেল বোর্ড। লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তাঁর স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। এ কারণে তাঁকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে বলে জানান তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
গত সোমবার খালেদা জিয়াকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে সোমবার আবেদন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি মতামত জানতে চেয়ে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দারের আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে’।
সরকার চাইলে আদালতে না গিয়ে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পারে বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের অনেকে। যদিও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার বিষয়ে নেতিবাচক নানা কথা বলেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত ও মুক্তি আদালতের নির্দেশে হয়নি। সরকার নির্বাহী আদেশে তা করেছে। ফলে মন্ত্রীরা এখন আদালতের এখতিয়ারের কথা বললে সে বক্তব্য ঠিক নয়’। এটি সরকারের বিবেচনার বিষয় বলেই তিনি উল্লেখ করেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এই দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। এরপর ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। শেষ গত মার্চ মাসে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

• বিষয় :
• খালেদা জিয়া