গুমে জড়িত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের বিচার চায় ‍‍ ‘মায়ের ডাক‍‍’

জাতীয় ডেস্ক

আগস্ট ১১, ২০২৪, ০৬:৩৩ পিএম

গুমে জড়িত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের বিচার চায় ‍‍ ‘মায়ের ডাক‍‍’

ছবি: সংগৃহীত

গুমের সঙ্গে জড়িত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাক।

রোববার (১১ আগস্ট) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মায়ের ডাক আয়োজিত মানববন্ধনে লিখিত দাবিগুলো পড়ে শোনান সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই দাবিগুলো তুলে ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সদুত্তর চেয়েছেন।

অন্য দাবি দুটি হল গুমের শিকার ব্যক্তিদের আয়না ঘরের মতো বন্দিশালা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং জাতিসংঘ ও নাগরিকদের তত্ত্বাবধানে গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দ্রুত একটি কমিশন গঠন করতে হবে। যা ঘটনার তদন্ত থেকে শুরু করে বিচার পর্যন্ত করণীয় সবই করবে, পাশাপাশি আয়না ঘরগুলো ভেঙে জাদুঘর বানাতে হবে, যাতে আর কেউ গুম, খুন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে না পারে।

এ সময় সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম বলেন, “স্বজনদের গুম করে আটকে রাখা হয়েছে। তারা জীবিত আছে কি না, ফেরত আসবে কি না, তা জানি না। আমরা চাই আমার মাসহ অন্য মায়েরা যেন সন্তান ফিরে পান।”

মায়ের ডাকের আরেক সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম জানান, “তারা এক যুগ পরে স্বাধীনভাবে শহীদ মিনারে এসে কথা বলতে পারছেন।”

মানববন্ধনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না) ১৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম মায়ের ডাকের আয়োজনে শহীদ মিনারে আসতে পেরেছেন। আর তাই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানান তিনি। তিনি বলেন, “আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। নতুন বাংলাদেশ গড়া সহজ বিষয় না। নতুন সরকারকে সময় দিতে হবে। তবে চোখ–কান খোলা রাখতে হবে।”

এ সময় স্বজনদের হাতে ছিল গুমের শিকার ব্যক্তিদের ছবি, কারও হাতে বিভিন্ন দাবিসংবলিত পোস্টার। কেউ হারিয়েছেন সন্তান, কেউ বাবা, কেউ স্বামী, কেউ ভাই বা পরিবারের অন্য কোনও স্বজনকে। বক্তব্য দিতে গিয়ে স্বজনদের অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

মানববন্ধনে বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের গবেষণা কর্মকর্তা তাসকিন ফাহমিনা জানান, “অধিকারের হিসেবে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত (কোটা সংস্কার আন্দোলনের হিসাব ছাড়া) ৭০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে এখনও ১৫০ জনের হদিস পাওয়া যায়নি।”

এ সময় সাংবাদিক সাঈদা গুলরুখ বলেন, “গত ২৮ বছরেও জানা যায়নি কল্পনা চাকমা কোথায়। ২৩টি গুপ্ত কারাগারের খবর পাওয়া যাচ্ছে, এগুলো দেশে কেন থাকবে?”

১০ বছর আগে ছোট হৃদির বাবা পারভেজ গুমের শিকার হয়েছেন। হৃদি বলে, “১০ বছর ধরে পাপাকে খুঁজছি। আমার পাপা তো নেই। আমার পাপাকে ফিরিয়ে দেন। অন্যদের মতো আমরাও স্বাধীন হতে চাই।”

রেহানা মুন্নীর বাসা থেকেই ২০১৩ সালে ছোট ভাই সেলিম রেজাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এ সময় রেহানা মুন্নী বলেন, “আমাদের শান্তি নেই। ঈদ নেই। আমার ভাইয়ের অপরাধ ছিল সে বিএনপি করে। বাবা মারা গেছে। মা মৃত্যুপথযাত্রী। শেখ হাসিনা কেন আমার ভাইকে গুম করল।”

মানববন্ধনে নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

Link copied!