আগস্ট ২৬, ২০২৩, ০২:০১ এএম
ঢাকার এক হতদরিদ্র বাবুর্চির কিশোরপুত্র মো. নূর নবী চট্টগ্রামে গিয়ে লাশ হল। এক বন্ধুর জন্মদিন পালনের জন্য নূর নবী ঢাকার বাসা থেকে বের হয়ে চট্টগ্রামে গিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে নামার পর নূর নবী ও তার সাথে যাওয়া হোসেনকেও হাসিখুশি দেখা গেছে।
নূর নবী ও মো. হোসেন দুই বন্ধু। তাদের বয়স ১৪ কিংবা ১৫ বছরের মতো। তাদের বাসা ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকায়। গত সোমবার হোসেনের জন্মদিন পালন করতেই ট্রেনে করে চট্টগ্রাম যায় দুই বন্ধু। কিন্তু জন্মদিন আর উদ্যাপন করা হয়নি। শুক্রবারই লাশ হয়ে ঢাকায় ফিরে নূর নবী। আর হোসেনের কোনো খোঁজই পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ এখন হন্যে হয়ে খুঁজছে অপরাধীদের।
শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকার একটি সড়কের পাশ থেকে নূর নবীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার মাথায় ও বুকে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশের অদূরে একটি রক্তমাখা ছুড়িও পাওয়া গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার নূর নবীর পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক। ফোনে আর্থিক সেবার একটি নম্বরে ওই দিন পাঁচ হাজার টাকাও পাঠিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু অপহরণকারীরা সেই টাকা দোকান থেকে নিয়ে যায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেলে নূর নবীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার বড় ভাই রমজান হোসেন বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
রমজান হোসেন বলেন, গত সোমবার তাঁর ছোট ভাই নূর নবী ও তার বন্ধু হোসেন বাসা থেকে বের হয়। পরে তারা জানতে পারেন হোসেনের জন্মদিন পালনের জন্য বন্ধুকে নিয়ে হোসেন চট্টগ্রামে গেছে। তাঁরা ভেবেছিলেন, দু–এক দিন পর ছোট ভাই বাসায় ফিরে আসবে। কিন্তু সে আর ফিরে আসেনি।
এরমধ্যে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রমজানের বাবার ফোনে একটি কল আসে। বলা হয়, নূর নবীকে অপহরণ করা হয়েছে। মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। নইলে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু রমজানের বাবা অতি দরিদ্র মানুষ। বাবুর্চির কাজ করে কোনও মতে সংসার চালান। তার কাছে অত টাকা নেই। নূরকে বাঁচাতে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার করে পাঁচ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন তিনি। এরপর আর কেউ তাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। পরে পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারেন, নূরের লাশ পাওয়া গেছে।
মুক্তিপণ পাঠাতে যে দোকানের নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে নগরের সেই ২ নম্বর গেট মেয়র গলি এলাকার সেই দোকানের মালিক মো. সুজন গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে এক যুবক দোকানে এসে ফোনে লেনদেনের নম্বর চান। পরে তাঁকে নম্বরটা দেওয়া হয়। বেলা দুইটার দিকে ওই নম্বরে পাঁচ হাজার টাকা আসে। কিন্তু ওই যুবক সেই টাকা নিতে দোকানে আর আসেননি। তাঁকে আগে কখনো এলাকায় দেখা যায়নি। তাঁর গায়ের রং শ্যামলা, মুখে মাস্ক ছিল।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কিশোরদের পরিচিত কেউ এই কাজে জড়িত, নাকি পেশাদার অপহরণকারীরা এই কাজ করেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অপর কিশোর কোথায় আছে তা তার পরিবারও জানে না। তাকে খুঁজে পাওয়া গেলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।