সম্প্রতি আফগানিস্তানে আলেবানের আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ায় সেখানে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনছে বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাক। শনিবার (১৪ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, আফগানিস্তানে তাদের তিন হাজারের মতো কর্মীর মধ্যে ১৯ জন বিদেশি নাগরিক রয়েছেন, এদের ১৫ জন বাংলাদেশি।
বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, আফগানিস্তানে কর্মরত সব বিদেশি কর্মীকে শুক্রবার থেকে নিজ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন রওয়ানা দিয়েছেন। আর যারা আফগানিস্থানের বাইরে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন, তাদের আপাতত কর্মস্থলে না ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানে বিগত দুই দশক ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কমিউনিটি উন্নয়ন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, মানবিক সহায়তা ও খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ইস্যুতে কাজ করছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল। দে শটিতে সক্রিয় তালেবান ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের কারণে দেশটি থেকে বিদেশি কর্মীদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশি সংস্থাটি।
ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক শামেরান আবেদের বরাত দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, "আফগানিস্তানে কর্মরত কর্মীদের ঝুঁকি নিরসন করে তাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্র্যাক"।
তবে ব্র্যাকের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, আফগানিস্তানে তাদের কার্যক্রম চলবে। সেখানকার স্থানীয় কর্মীরাই চলমান প্রকল্পগুলো অব্যহত রাখবেন।
ব্র্যাক ছাড়াও আশা নামে আরেকটি এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করতো আফগানিস্তানে। কিন্তু সংস্থাটি আগেই দেশটি থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলেছে বলে জানা যাচ্ছে।
এমন সময়ে ব্র্যাকের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তাদের কূটনীতিবিদ ও নাগরিকদের বের করে আনার জন্য কাবুলে সৈন্য পাঠিয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৭৯ সালের পর থেকে কাবুলে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। পাশের দেশ উজবেকিস্তান থেকেই আফগানিস্তান সম্পর্কিত বিষয়গুলো দেখভাল করা হয়। বর্তমানে উজবেক রাজধানী তাসখন্দ থেকে আফগান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন সেখানকার রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি ভয়েস অব আমেরিকার সংবাদদাতাকে বলেছেন, ঢাকায় আফগান দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খোঁজখবর রাখছে। আমি তাসখন্দ থেকে যা পাই তা সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাকে জানাচ্ছি। মিশনে একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। ই-মেইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের সোর্স থেকে কিছু খোঁজখবর পাচ্ছি। যেসব বাংলাদেশি সেখানে কর্মরত ছিলেন তাদের ব্যাপারে খবর রাখছি। বিশেষ করে, এনজিওকর্মীদের খোঁজ নিচ্ছি। চারজন বাংলাদেশি জেলে রয়েছেন। তাদের মুক্ত করার চেষ্টা করছি।
আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমা সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকেই দোর্দণ্ডপ্রতাপে সশস্ত্র অভিযান শুরু করেছে তালেবান। এর মধ্যে গত ৬ আগস্ট থেকে দেশটির ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ১৮টির দখল নিয়েছে তারা। আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহরও এখন তালেবানের দখলে। তারা যেকোনো সময় কাবুলে হামলা চালিয়ে পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের পতন ঘটাতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
মার্কিন গোয়েন্দাদের বিশ্বাস, মাস তিনেকের মধ্যে কাবুল সরকারের পতন ঘটবে। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, তালেবান গোটা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এ অবস্থায় কাবুলের দূতাবাসগুলো থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।