প্রযুক্তির পালাবদলে বেড়েছে ফেলে দেয়া পণ্যের পরিমান। আর যার ফলে দেশে প্রতিদিনই বাড়ছে ই-বর্জ্য। তবে সাধারণ বর্জ্যের মত পচনশীলতো নয়ই বরং ক্রোমিয়াম,লেদ,মার্কারির মত তীব্র ক্ষতিকর পদার্থ বহন করছে এগুলো। যার ফলে দেশে ই বর্জ্য পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির মূল কারণ হয়েছে। কিন্তু ২০ বছরেও এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত নীতিমালা হয়নি দেশে।
বাৎসরিক ৪ লাখ টন বর্জ্য
গত ১০ বছরে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ গুণ।বেসরকারি সংস্থা এনভাইরনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ইএসডিও) গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪ লাখ টন ই-বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। ২০২৩ সালে এই ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ লাখ টন। এখনই এর ব্যবস্থাপনা করা না গেলে সামনের দিনে বড় ধরনের ঝুঁকির সৃষ্টি করবে। দুই-একটি ছোট প্রতিষ্ঠান কিছু ই-বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। তবে বড় পরিসরে এই উদ্যোগ নেওয়া না গেলে সংকট বাড়বে।
রিসাইকেল হচ্ছে না ই বর্জ্য
বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক মেশিনারি মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশন (বিইএমএমএ) এর গবেষণা বলছে, প্রতি বছর দেশে যে পরিমান ই বর্জ্য উৎপাদিত হয় তার মাত্র ২০-৩০ শতাংশ পণ্য রিসাইক্লিং বা ধ্বংস হচ্ছে।
সে হিসেবে বছরে প্রায় ৩ লাখ টন ই বর্জ্য এখনও কোন ধরনের রিসাইকেল করা হচ্ছে না। এই অবস্থায় চলতে থাকলে আগামী ২০২৩ সাল নাগাদ প্রায় ৮ লাখ টন বর্জ্য কোন ধরনের রিসাইকেল বা ধ্বংস করা হবে না।
২০১৭ সালের খসড়ায় অসন্তোষ
‘ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক পণ্য হতে সৃষ্ট বর্জ্য (ই-বর্জ্য) ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৭’ খসড়া আইনের প্রস্তাবিত ওই নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রস্তুতকারক বা দোকানীরা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য বিক্রির সময় সেই পণ্যের দামের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হারে টাকা সেই গ্রাহকদের কাছ থেকে রেখে দেবে। পণ্যটি যখন ই-বর্জ্যে রূপান্তিরিত হবে তখন সেটি দোকানীর কাছে ফেরত দিয়ে সেই ৫ শতাংশ টাকা ফেরত নেবে। এই নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার বলেন, সাধারণ মানের একটি পণ্য কিনতেই মানুষকে হিমশিম খেতে হয়। সেখানে আরও টাকা দোকানীর কাছে ক্রেতারা গচ্ছিত রাখবে এটা কল্পনাও করা যাবে না। নীতিমালাটি বাস্তবায়ন হলে এই খাতে অনেকটাই স্থবিরতা আসতে পারে।
সংকটে পুরো এশিয়া
ই-বর্জ্য নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, এশিয়ার সবগুলো দেশই সংকটে রয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশদূষণ। এই বিপদ থেকে বাঁচার উপায় হলো ই-বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্ব্যবহার। এশিয়ার ই-বর্জ্য নিয়ে ইউনাইটেড ন্যাশনস ইউনিভার্সিটি গত বছর এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে এশিয়ায় ই-বর্জ্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ। ১২টি দেশের ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা দেখেছে, এই পাঁচ বছরে ই-বর্জ্যের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ২৩ লাখ টন। এদের মধ্যে চীনের অবস্থা ভয়াবহ। এ সময় তাদের দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ই-বর্জ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৬ লাখ ৮১ হাজার টন। যা পুরো এশিয়ার জন্য উদ্বেগের বলে বলা হচ্ছে।
নীতিমালায় নিরব অপেক্ষা
ভয়াবহতা সত্ত্বেও এ বিষয়ে নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করে প্রকাশ না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, ‘বিগত ২০ বছর ধরে ই-বর্জ্যের একটি নীতিমালা প্রণয়নের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের একটি নীতিমালার (ডিসপোজাল ম্যানেজমেন্ট রুল) খসড়া পরিবেশ অধিদফতরে পড়ে আছে।’
খসড়া নীতিমালার সর্বশেষ অবস্থান জানতে কথা হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, ভেটিংসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে নীতিমালার খসড়াটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুব শিগগিরই খসড়াটি বিজি প্রেসে ছাপানোর জন্য পাঠানো হবে।’