ইতালির রোম শহরকে পৃথিবীর ‘নীরব শহর’ বলা হয়। সে এক ভিন্ন গল্প হলেও গত এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে সারাদেশে ঈদের ছুটি শুরু হলে গতিময় ব্যস্ত নগরী ঢাকা যেন এক ‘নীরব শহর’-এর রূপ নিয়েছিল। কারণটা সবারই জানা। রাজধানীতে কর্মজীবী মানুষ সপরিবারে ঈদ উদযাপনে নিজ নিজ শহরে বা গ্রামে চলে গেলে যেন জনশূন্য হয়ে পড়ে ঢাকা নগরী। এরপর গেল দুটি সপ্তাহেও ঢাকার জনশূন্যতা কাটেনি। সন্ধ্যার পরপরই জনশূন্যতার সে ছাপ দুচোখে ধরা দেয়। স্পষ্ট হয়ে উঠে নীরবতা।
হালকা যানবাহন, পথে-ঘাটে, অফিস-আদালতে তুলনামূলক কম উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্যালেন্ডারের হিসেবে ২২ এপ্রিল শনিবার ঈদ উদযাপন হলেও রবিবার ছিল সরকারি ছুটি। এরপর সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে রাজধানী ছিল ফাঁকা। পরের সপ্তাহ শুরু হয় রাজধানীর অফিস-আদালতে কম উপস্থিতি দিয়েই। সপ্তাহের শেষদিন বৃহস্পতিবার বৌদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি থাকায় শুক্র ও শনি মিলিয়ে আবারও তিন দিনের কর্মহীনতা।
সব মিলিয়ে দীর্ঘ ছুটির আমেজ যেন ঢাকায় ঈদ পরবর্তী সময়েও কাটছে না। চিরচেনা ব্যস্ত নগরী ঢাকা এখনও স্বরূপে ফিরেনি। সড়কে নানারকম যানবাহনের সারি, মুহুর্মুহু হর্ন, গন্তব্যের লক্ষ্যে পথচারীর ব্যস্ত ছুটে চলা, স্কুলভ্যানে শিক্ষার্থী, এ্যাম্বুলেন্সে রোগীর স্বজনদের উদ্বিগ্ন চাহনি - এসবই যেন ফিরে পেতে সময় লাগছে ঢাকা মহানগরীর।
"এমন শহরই ভালো। যানজট নেই, ছুটে চলার তাগিদ নেই। নেই পথে বাড়তি সময় ব্যয় হওয়ার উদ্বেগ। এমন শহরে বসবাস যেন স্বস্তির," এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন ব্যাংকার সুলতান মাহমুদ।
তিনি ধারণা করে বললেন, "আসছে সপ্তাহেই ঢাকা জনকলরবে ভরে উঠবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে, কর্মজীবী, শ্রমজীবী মানুষ ফিরবে কর্মস্থলে। তারপর এমন স্বস্তি আর থাকবে না।"
বছরজুড়ে ব্যস্ত নাগরিক জীবনের চাপ নেওয়া অনেকে আবার ঈদের ছুটির দীর্ঘ অবকাশে একা বা পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে গেছেন ঢাকার আশেপাশে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা রিসোর্টগুলোতে, নিজ জেলায় দর্শনীয় স্থানে বা পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। কেউ কেউ সিলেটের চা বাগান ও হাওরের মোহময়ী দৃশ্য অবলোকনের মধ্যে প্রকৃতিতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়েছেন এ ছুটিতে।
তবে দীর্ঘ ঈদের ছুটি নিম্ন আয়ের দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবিকায় কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। লোকজন নাই, কাজ নাই, তাই আয় নেই তাদের।
কারওয়ান বাজার থেকে ডাব কিনে ভ্যানে নিয়ে মালিবাগ মোড়ে দাড়িয়ে বিক্রি করেন সগীর মিয়া। তিনি বলেন, বেচাবিক্রি না থাকায় ঈদের পর থেকে পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারছি না।
নির্মাণশ্রমিক আহমদ আলী মগবাজার রেলক্রসিংয়ের পাশের একটি চা দোকানের সামনে মাটিতে নির্লিপ্ত বসে আছেন। তিনি গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় এসেছেন কাজ করে রোজগার করবেন আশায়। কিন্ত দীর্ঘ ছুটিতে 'কাজ নাই' বলে তিনি জানালেন।