মার্চ ১৭, ২০২৩, ০১:০৩ পিএম
সারাদেশ থেকে কর্মসংস্থানসহ নানা কারণে ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার মানুষ এসে থিতু হন। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে ঢাকার লোকসংখ্যা। জীবন ও জীবিকার আয়োজন এই রাজধানী নগরীতেই বেশি। তাই প্রতিনিয়ত ঢাকামুখী এই জনস্রোত চলছে। ঢাকায় মানুষের চাপ বাড়ে, বাড়ে যানজট ও জনজট। কিন্তু সে হিসেবে বাড়ে না নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলো। কারণ এসব সুযোগ সুবিধার বিধান না রেখেই অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠেছে ঢাকা। যে কারণে জনচাপ ও সমস্যার চাপ মিলে বিস্ফোরন্মোখ এখন ঢাকা।
নতুন ঢাকা ও পুরান ঢাকা দুই দিকেই সমস্যার পাহাড় বাড়ছে। তবে ঘিঞ্জি অবস্থা আর জনসংখ্যার চাপে পুরান ঢাকা সবচেয়ে বেশি দূষিত ও অনিরাপদ অবস্থায় আছে। পুরান ঢাকার বিভিন্ন গলি মহল্লা ঘুরে চোখে পড়ে শতবর্ষী নানা ভবন, রাসায়নিক দ্রব্যের কারখানা, অন্ধকারচ্ছন্ন গলি। এমনকি সেখানে নেই আলো বাতাস চলাচলের সামান্য সুবিধাও। আর যত্রতত্র অপরিক্লপিতভাবে গড়ে উঠা রাসয়নিক কারখানা থেকে বিষাক্ত গ্যাস যেমন ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে, তেমনি ভবন ধস আর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও কম নয়।
একটি ভবনের সাথে আরেকটি ভবন তিল পরিমাণ ফাঁকা না রেখে এভাবেই গা ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
দুই দিনের ব্যবধানে রাজধানীর দুই এলাকার দুটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে গেল। এ দুটি ঘটনায় শতাধিক আহতের ঘটনায়ও ঘটেছে। এর আগেও বড় অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে— ঢাকায় এই বিস্ফোরণ ও এ ধরনের দুর্ঘটনার পেছনে দায় কার?
এসব প্রশ্নে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেগাসিটি ঢাকার সুউচ্চ ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো প্রতিযোগিতা করে গড়ে উঠলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না কেউ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সে ধরনের কোনো সমন্বয় নেই বললেই চলে। শতর্বষী পুরানো ভবনে সংস্কার না করেই মার্কেট, এক ইঞ্চি জায়গা না ছেড়েই পাশাপাশি লাগোয়া ভবন নির্মানসহ অসংখ্য গ্যাসলাইন ঢাকার তলদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। এতযে লাইন তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের কাছে তার নকশাও নেই।
সম্প্রতি গুলিস্তান থেকে নবাবগন্জের ইলেকট্রনিক মার্কেটে ঘুরে দেখা যায় গায়ে গা লাগিয়ে নবাবপুর থেকে রায় সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০০টি ভবন রয়েছে যেখানে একটি ভবনও এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গাও ছেড়ে নির্মাণ করা হয়নি।
নবাবপুরে রয়েছে ৮ থেকে ১০টি শতবর্ষী ভবন। রয়েছে শতবর্ষী নবাবপুর সাব পোস্ট অফিসও। যার নিচে রয়েছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মার্কেট, দোকান। তবে এসব ভবনে নেই অগ্নিনিরাপত্তা বা দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার মত প্রযাপ্ত ব্যবস্থাও। আরও কিছুদূর এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে নবনির্মিত মাজেদ সরদার টাওয়ার-৩ লেখা ৭ তলা বহুতল একটি মার্কেট। এই ভবনের বেসমেন্টে রয়েছে অসংখ্য দোকানের মালামাল। বেসমেন্টটি ব্যবহার করা হচ্ছে গোডাউন হিসেবে। অথচ ওই মার্কেটেও নেই দুর্ঘটনা মোকাবিলা বা অগ্নিনিবার্পণ করার মতো কোন কিছুই। মাজেদ সরদার ভবনটির ডান পাশে রয়েছে শতবর্ষী একটি বিশাল মার্কেট, যে মার্কেটের দেয়াল লাগোয়া মাজেদ ভবন নিজেদের ভবনও নির্মান করেছে। তবে ভবনটির বামপাশের হোটেলের বিল্ডিং থেকেও জায়গা ছেড়ে দেয়নি এতটুকু।
ঘিঞ্জি এই ভবনগুলোর বেসবেমেন্টে অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে গুদাম। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ
এখান থেকে আরও সামনে গেলে সুরিটোলা বংশাল ফাড়ি। তারও সামনের গলিতে জনৈক আফজাল মিয়ার সাততলা ভবনটি চোখে পড়ে যেটি কিনা একদিকে কাত হয়ে আছে। এই কাৎ হয়ে থাকার কারণ জানা গেল স্থানীয় এক বাসিন্দা সাবিলকে জিজ্ঞাসা করে। সাবিলা জানালেন, গেলো বছর এক ভূমিকম্পে ভবনটি একপাশে কাৎ হয়ে গেলেও এক বছর রাজউক বা প্রশাসনের কেউ এটি পরিদর্শন করতে আসেনি। এখন ওই গলি দিয়ে যাতায়াতের সময় লোকজন ভয়ে ভয়ে পথ চলেন কখন না জানি ভবনটি মাথার উপর ভেঙে পড়ে।
ভবনটিতে ২০টিরও বেশিসংখ্যক পরিবার বর্তমানে ভাড়া নিয়ে বাস করছেন। ভবন মালিক দেশের বাইরে থাকেন। তার এক বোন জামাই মগবাজার থেকে এসে দেখাশোনা করেন ভবনটি। তবে ভবনের বিষয়ে জানতে কোন ভাড়াটিয়ার কাছেই সেই বোন জামাইয়ের নম্বর পাওয়া গেল না।
সুরিটোলার ওই ৭ তলা ভবন হেলে পড়াসহ পুরান ঢাকার অপরিকল্পিত ভবনগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজউকের জোন ৭ এর অথরাইজড অফিসার মাকিদ হাসান বলেন, আমি নতুন দায়িত্বে এ জোনে এসেছি। আমাদের সার্ভে চলছে। সার্ভে শেষ হলে উর্দ্ধতন কর্মকতারা যে নির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী কাজ শুরু করা হবে।