দীর্ঘ ৫ বছর পর নগরের বিশদ পরিকল্পনার খসড়া দিল ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ)। কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনাতেও খুবই অল্প পরিমান ভূমি রাখা হয়েছে শহরের বনাঞ্চলের জন্য। খসড়ায় এতটাই কম বনাঞ্চলের প্রস্তাব করা হয়েছে যে, খোদ নগর পরিকল্পনাবিদরাও বিস্ময় প্রকাশ করে সমালোচনা করেছেন। গত শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে রাজউক আয়োজিত ড্যাপের জাতীয় সেমিনারে এই খসড়া দেওয়া হয়।
ড্যাপের এই পরিকল্পনায় দেখা যায়, বনাঞ্চলের জন্য তারা ৫ হাজার ৩৩৩ একর ভূমি ব্যবহার করার প্রস্তাব করেছে। যা মূল ভূমির ১.৪১ শতাংশ। বিশ্বের অন্যান্য শহরের তুলনায় এ প্রস্তাব খুবই নগন্য। বিশ্বের সবচাইতে বেশি বনাঞ্চল রয়েছে নিউইয়র্ক শহরে। শহরটির ৬১ শতাংশই বনাঞ্চল। এ ছাড়া লন্ডনের ৪৭ শতাংশ, জাপানের টোকিও শহরের ৩৬ শতাংশ, ইসলামাবাদে ২২ শতাংশ, দিল্লিতে ২০ শতাংশ এবং কলকাতাতে ১১ শতাংশ বনাঞ্চল রয়েছে।
এতো কম বনাঞ্চল দিয়ে একটি পরিকল্পিত নগরি তৈরি করা সম্ভব কি না, জানতে চাইলে স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, শুধু নগরী না নগরীর আশেপাশের গাজিপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক বনাঞ্চল রয়েছে। যেগুলো তারা হিসাবের মধ্যে ধরে না। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে জনঘনত্বপূর্ণ শহর হচ্ছে ঢাকা। সেখানে যে পরিমান বনাঞ্চল আমরা দেখতে পাই তা ওই জনঘনত্বের অনুপাতে ছিটেফোটাও না। এখন ড্যাপ যে পরিমাণ বনাঞ্চলের প্রস্তাবনা দিয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। অতএব এটা বাড়ানোর জন্য আরো যথাযথ পরিকল্পনা করা দরকার ছিলো। সেই ঘাটতিটা আমরা এইখানে দেখতে পেয়েছি।
বর্তমান ঢাকার পরিস্থিতি অনুযায়ী বনাঞ্চল বাড়ানো সম্ভব কি না, জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ঢাকার বর্তমান পরিস্থিতিতে বনায়নের জন্য জায়গা বের করা প্রায় অসম্ভব। তবে নদীর পাড়সহ খালের যে পার উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে সেটাই যদি তারা কার্যকর করতে পারে তবেই বিপুল পরিমাণ জায়গা তৈরি হবে। যেখানে নতুন বনায়ন করার সুযোগ তৈরি হবে। এছাড়া ঢাকার মধ্যে অনেক নতুন নতুন ইউনিয়ন তৈরি হচ্ছে। এই ইউনিয়নগুলো যদি তাদের খাল এবং নদীর পারগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বনায়নের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে তবে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে। এখন ড্যাপের উচিত এই প্লানটা তাদের পরিকল্পনায় নেওয়া।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের মতে নগরে প্রতি কিলোমিটারে যে পরিমান মানুষ বসবাস করে তার উপর নির্ভর করে বনাঞ্চল তৈরি না করলে পরিকল্পিত নগর কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমাদের যে পরিমান বনাঞ্চল রয়েছে এবং যে পরিমান বনাঞ্চলের প্রস্তাব করা হয়েছে তা শহরে মানুষের বসবাসের তুলনায় খুবই নগণ্য। ফলে এটা বাড়াতে হবে। নগরে প্রতি কিলোমিটারে যে পরিমান মানুষ বসবাস করে তার উপর নির্ভর করে বনাঞ্চল তৈরি করতে হবে। নইলে পরিকল্পিত নগর তৈরি করা কখনই সম্ভব হবে না। ড্যাপের পরিকল্পনায় অনেক ত্রুটি রয়েছে। এটি আবার পর্যালোচনা করা দরকার
প্রতিটি বাড়ির খালি জায়গায় গাছ লাগানোর আইন করার প্রস্তাব করা হচ্ছে বলেও জানান স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বাড়ির যে খালি জায়গা থাকবে সেখানে অবশ্যই গাছ লাগাতে হবে। এর বিকল্প অন্য কিছু করা যাবে না। এই বিষয় আমাদের সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে। আশাকরি খুব দ্রুত এই আইন আমরা পাশ করতে পারবো।’
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, বনাঞ্চল সরকারের বন বিভাগ থেকে সংরক্ষিত যে জায়গাগুলো রয়েছে সেগুলো আমরা চিহ্নিত করেছি। আমরা বনাঞ্চল নয় পার্ক বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করছি। আমরা বলেছি উন্মুক্ত স্থানগুলো বাড়ানোর কথা। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে বনাঞ্চল এবং উন্মুক্ত স্থানের মধ্যে পার্থক্যটা কি। আমরা বলেছি রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো এরকম পাঁচটা পার্ক ঢাকা শহরে করতে হবে। ৪৯টা জলকেন্দ্রিক পার্ক বাড়াতে হবে। এই ৪৯টি পার্ক এবং রমনা উদ্যানের মতো আরও পাঁচটি উদ্যান যদি ঢাকা শহরে তৈরি করা যায় শহরের পুরো চেহারাই পাল্টে যাবে।