পদ্মা বহুমুখী সেতুর আজ এক বছর পূর্তি। ২০২২ সালের এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেতুর উদ্বোধন করেন। আর এর মধ্য দিয়ে কোটি কোটি মানুষের, স্বপ্ন, আশা-আকাংখা পূরণ হয়। পদ্মা সেতুর বদৌলতে বদলে গেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার জনপদের চেহারা। গত এক বছরে যোগাযোগ, অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের ফলে বদলে গেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প। দুই স্তর বিশিষ্ট ইস্পাত ও কংক্রিট নির্মিত এই সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলায় চাষাবাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়ে গেছে কৃষিনির্ভর খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদন। উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত হয়ে আরও সহজ। পরিবহন ব্যবস্থা দ্রুত ও সহজ হওয়ায় ক্রেতাও মিলছে আগের তুলনায় বেশি। চুক্তি ভঙ্গের সুযোগ না থাকায় কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তনে সাফল্য দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর ২৬ শে জুন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে সাবলীল হয়েছে গ্রামের মানুষের সাথে শহুরে মানুষের যোগাযোগ। খুব সহজেই মানুষ রাজধানী ঢাকায় থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে ফিরে যেতে পারছেন তুলনামূলকভাবে কম সময় নিয়ে। ঈদযাত্রায় আগের মতো আর ফেরিঘাটে যাত্রীদের আর অসহনীয় ভোগান্তি দেখা যায় না। কাজ শেষ হলে ফেরি ধরার তাড়াও নেই তাদের। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নতুন প্রাণ দিয়েছে এই সেতু। বরিশালে প্রথম বারের মতো তৈরি পোশাক শিল্পাঞ্চল তৈরি হচ্ছে। মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিও বেড়ে গেছে পদ্মা সেতুর কল্যাণে।
গত এক বছরে পদ্ম সেতুর বদৌলতে রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ খাতে বিপ্লব ঘটেছে। পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলের পরিসংখ্যানই তা প্রমাণ করে দেয়। আয়ের দিক থেকেও দেশের অন্যান্য সেতুর তুলনায় প্রথম বছরে এগিয়ে রয়েছে পদ্মা সেতু।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৬ জুন থেকে চলতি বছরের ২০ জুন পর্যন্ত ৩৬২ দিনে পদ্মা সেতু দিয়ে ৫৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৯টি গাড়ি যাতায়াত করেছে। আর এসব গাড়ির টোল থেকে ৭৯০ কোটি ৯৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকা আয় হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষ এই আয় থেকে ৬২২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করেছে। অন্যদিকে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে আয় হয়েছে ৭০৪ কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। পদ্মা সেতু দেশের সড়কপথে কানেক্টিভিটি তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। দেশ বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করা আশাজাগানিয়া ৬. ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি আজ স্বাধীন বাংলাদেশের সক্ষমতার প্রতীক।