পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, “বাজারে রটেছে যে বিদেশিরা বলেন বাংলাদেশ নাকি চীনের লেজুড় হয়ে গেছে! কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ নাকি শ্রীলঙ্কার মতো ঋণের ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। বাবা, ঋণের ফাঁদে পড়তে হলে তো ৪০ শতাংশ ঋণ নিতে হবে!”
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে এক আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গুম নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পক্ষের চাপ প্রসঙ্গে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি এদিন সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি আয়োজিত ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
গুম নিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ফোরামে আলোচনার বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যেহেতু আমরা রাজনৈতিক-কৌশলগত খুব ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের আশপাশে বড় বড় দেশ এবং আমাদের সমুদ্রে অবাধে যাতায়াতের বিষয়ে তাদের অনেক বেশি আগ্রহ রয়েছে। সে জন্য এখন আমরা সবার চক্ষুশূল। আসল উদ্দেশ্য কিন্তু মানবাধিকার না, গুম-খুনও না। আসল উদ্দেশ্য এসব চাপ দিয়ে কিছু ফায়দা সংগ্রহ করা যায় কি না।”
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সংজ্ঞা অনুযায়ী আমাদের দেশের মোট ঋণের হার ১৬ শতাংশের মতো। আমরা সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে। এদের কাছ থেকে ঋণের হার মোট ঋণের প্রায় ৭৩ শতাংশ। এর বাইরে যে দেশের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছি, সেটা হচ্ছে জাপান। চীনটিন তো এর ধারেকাছেও নেই। মাত্রা ৫ শতাংশের মতো। কিন্তু আমাদের কিছু জ্ঞানপাপী বলে বেড়ান, বাংলাদেশ সতর্ক হও। আমরা কোনো দিন ঋণ পরিশোধে এক দিনও দেরি করিনি। এই বদনাম আমাদের নেই।”
বাংলাদেশ চীনের লেজুড়বৃত্তি করছে, এমন সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বলা হচ্ছে, আমরা চীনের লেজুড় হয়ে যাচ্ছি। আমাদের সামরিক বাহিনীর সমরাস্ত্রের ৮০ শতাংশ চীন থেকে কিনছি। এটা ডাহা মিথ্যা। আমরা যা কিনি, সব দেশ থেকেই কিনি। যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি তুরস্ক—সব জায়গা থেকে কিছু কিছু কিনি। ভারত আমাদের ঋণ চুক্তির আওতায় কিছু দিতে চাচ্ছে।
আমাদের সেনাবাহিনী জানে কী কিনবে। আরেকটি প্রশ্ন আসছে, চীন আমাদের তিস্তা প্রকল্পের জন্য টাকা দেবে। চীন উৎসাহ দেখিয়েছে যে ওটা তারা করতে চায়। আর যায় কোথায়! গেল গেল, বাংলাদেশ চীন হয়ে গেছে। এই ধরনের একটা ভয় তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের অনেক জ্ঞানপাপী ইচ্ছা করে এবং এর মধ্যে দুঃখজনকভাবে অনেকে এসব শুনে বলে সত্যি সত্যি দুর্ঘটনা হচ্ছে। তারা ভয় পাচ্ছে।”