হাড় কাঁপানো পৌষের শীতে বিপর্যস্ত দেশ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ৬, ২০২৩, ১০:০৬ এএম

হাড় কাঁপানো পৌষের শীতে বিপর্যস্ত দেশ

সারা দেশে হাড় কাঁপানো পৌষের শীতে ছন্দপতন ঘটেছে জনজীবনের। দেশের আট জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঘন কুয়াশা কমিয়ে এনেছে দৃষ্টিসীমা। সূর্যের দেখা না মেলায় দিন ও রাতের ব্যবধান কমে গিয়ে দুদিন ধরে সারা দেশেই তীব্র শীত।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচণ্ড ঠান্ডায় স্থবির জনজীবন। বেশি বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্ররা।

রাজশাহী

রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ৯৭ শতাংশ। সারা দিন ধরে পিনপিনে বাতাসের কারণে নগর জীবনে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তীব্র শীতে মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিদেরও জবুথবু অবস্থা।

এদিকে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে। অন্যদিকে ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলো রাস্তায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। আর ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ।

যশোর

বৃহস্পতিবার সকালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুরে শীতের প্রকোপ কিছুটা কমলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে আবারও জেঁকে বসে।

জেলার বিমানবাহিনীর আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, যশোরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে এবং শুক্রবার তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বরিশাল

বরিশালে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। জেলার শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে ৩৬টি বেডের বিপরীতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ১২৩ জন। এ হাসপাতালে এক সপ্তাহে শ্বাসকষ্টে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর। আর বরিশাল বিভাগে শ্বাসকষ্টে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে ৩ হাজার ১৮৭ জন।

এ ছাড়া খুলনা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। কুয়াশা ভেদ করে কাজে যেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে।

শেরপুর : জেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা ও চরাঞ্চলের মানুষ শীতে সীমাহীন কষ্ট পাচ্ছে। অনেকে শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হলেও কাজ পাচ্ছেন না। গরিব, অসহায়, ছিন্নমূল শ্রমজীবী মানুষ খড়কুটো ও আবর্জনায় আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের কারণে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগবালাই বেড়ে গেছে।

চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : শীতে বৃদ্ধ ও শিশুরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোজাম্মেল হোসেন জানান, মানুষ ডায়রিয়াসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা এতে বেশি ভুগছেন। প্রতিদিন হাসপাতালে এসব রোগী আসায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ উদ্বিগ্ন বলেও তিনি জানান।

মেহেরপুর : কনকনে শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পিপিআর রোগ। গত এক মাসে প্রায় অর্ধশত ছাগল মারা গেছে এ রোগে। এতে শঙ্কিত ছাগল খামারি ও কৃষক। চিকিৎসায় সুস্থ না হওয়ায় যে কোনো দামে আক্রান্ত ছাগল বিক্রি করে দিচ্ছে ছাগল পালনকারীরা। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের দাবি, পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগেভাগেই ২ লাখ ৩৪ হাজার ছাগল-ভেড়াকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।

রাজবাড়ী : দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঘন কুয়াশার কারণে ৮ দিনে ৫০ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এতে নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রী ও পরিবহণ শ্রমিকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। 

তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। এই শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

মঙ্গল ও বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শ্রীমঙ্গলে। বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড চলে যায় যশোরে। শ্রীমঙ্গলের মতোই যশোরে বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ২০ ডিগ্রি। তাপমাত্রার পার্থক্য দাঁড়ায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের অনুভূতি ছিল তীব্র।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, তীব্র শীত ও শৈত্যপ্রবাহের অন্যতম কারণ হলো বাতাসের গতি এবং সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে যাওয়া।

এছাড়া কুয়াশার প্রকোপ, সূর্যের স্বল্পস্থায়ী কিরণকাল কিংবা একেবারেই সূর্যের মুখ দেখতে না পাওয়ার ওপরও শীতের তীব্রতা নির্ভর করে। বাতাসের গতি বেশি থাকলেও শীতের অনুভূতি বেশি মনে হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সবশেষ বার্তায় বলা হয়, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপবলয়ের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং এর কাছাকাছি বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

সংস্থাটির পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রায় পার্থক্যের কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি অব্যাহত থাকতে পারে।

Link copied!