শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ‘আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থিদের দেশীয় অনুসারীরা’ হেফাজত ইসলামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান মো. মিছবাহুর রহমান চৌধুরী। মঙ্গলবার (৪ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিতি ইসলামী দলটির এই নেতা।
মিছবাহুর রহমান বলেন, হেফাজত ইসলামের আমির আহমদ শফীর মৃত্যুর পর সংগঠনটির নেতৃত্ব ‘আন্তর্জাতিক উগ্রপন্থিদের অনুসারী, ক্ষমতালোভী একদল আলেম নামধারী কুচক্রীদের’ হাতে চলে যায়। সে লোকগুলোর সঙ্গে জামায়াত-শিবির ও তাদের মিত্রদের গোপন শলাপরামর্শের মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসাকে কুক্ষিগত করে তাদের সামনে হেফাজতের ব্যানারে জ্বালাও, পোড়াও, লুটপাট, হত্যা, নৈরাজ্য করে দেশের গৃহযুদ্ধ বাঁধিয়ে সরকার পতনের লক্ষ্যে দেশ ও বিদেশি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছিল।”
ইসলামী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, আলেম নামধারী জামায়াত ও হেফাজতি একদল লোক হেলিকপ্টার নিয়ে সারা দেশে ওয়াজ ও তাফসির মাহফিলে নামে মিথ্যাচার করেছে। সংবাদ সম্মেলনে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে পূর্বসূরিদের ঐতিহ্য অনুযায়ী পরিচালনার লক্ষ্যে ‘আল-হাইয়াতুল উলাইয়া লিল জামিয়াতিল ক্বাওমিয়্যাহ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ঘোষিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার দাবি জানান মিছবাহুর রহমান।
কয়েকটি কওমি মাদ্রাসায় সাম্প্রতিক সময়ে ‘উগ্র সহিংস কার্যক্রম’ পরিচালনাকারী ছাত্রদের বহিষ্কারের পাশাপাশি সাম্প্রতিক তাণ্ডবে নেতৃত্বদানকারী হেফাজতে ইসলামের ‘বিদেশি অর্থ সংগ্রহকারী যোগানদাতাদের’ বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানান।
কওমি মাদ্রাসার ভাবমূর্তি রক্ষায় নতুন কমিটি হবে
কওমি মাদ্রাসার ঐতিহ্য, শিক্ষা, ‘আমল-আখলাক’ রক্ষা করে ভাবমূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শায়খুল হাদিস আল্লামা রুহুল আমিন খানকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। জুন মাসে ঢাকায় একটি ‘ওলামা-মাশায়েখ মহাসম্মেলন’ করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান। বারিধার মাদ্রসার সাবেক অধ্যক্ষ ওয়াহিদুজ্জামান, মুফতি মাওলানা শাব্বির আহমেদ কাসেমীসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সেখানে ছিলেন।
শাহ আহমদ শফী পরবর্তী নেতৃত্ব
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমির ছিলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী। তার সময়ে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সরকারবিরোধী অবরোধে হেফাজতের তাণ্ডবের পর তার সঙ্গে সরকারের সমঝোতা হয়; সনদের স্বীকৃতিসহ সরকার কওমি মাদ্রাসার জন্য বেশ কিছু প্রণোদনাও দেয়। কিন্তু তিনি গত বছর মারা যাওয়ার পর হেফাজতের নেতৃত্ব নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিরোধ শুরু হয়। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা হেফাজতনেতারা গত বছরের শেষ দিকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় নেমে ফের আলোচনায় আসে। ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েও আলোচিত হন মামুনুল।
এর মধ্যে গত নভেম্বরে সম্মেলনে সাবেক মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়। কওমি সনদের স্বীকৃতি ঘিরে হেফাজতের ওই অভ্যন্তরীণ বিরোধে পদত্যাগ করা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনকে ‘অবৈধ’ বলে নতুন কমিটিকে মানতে নারাজ ছিলেন আহমদ শফীর অনুসারীরা।
নরেন্দ্র মোদী বিরোধী বিক্ষোভ
নতুন ওই কমিটি গঠনের ছয় মাস না যেতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকেন্দ্রিক বিক্ষোভ থেকে হেফাজতের নেতাকর্মীরা সারা দেশে তাণ্ডব চালায়। বিক্ষোভ ও হরতালে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামে সহিংসতায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়।
এসব ঘটনায় অর্ধশত মামলার পর হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ডজনখানেক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হচ্ছে। পুলিশের দাবি, হেফাজত নেতারা নাশকতার বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল।