হেফাজত নেতা মামুনুলকে গ্রেপ্তারের দাবি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মার্চ ১৯, ২০২১, ০৮:৪১ এএম

হেফাজত নেতা মামুনুলকে গ্রেপ্তারের দাবি

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। তারা হেফাজতসহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধেরও দাবি জানিয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা অব্যাহত আছে।

বৃহস্পতিবার পৃথক বিবৃতিতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা এবং লালমনিরহাটে ধর্মের নামে হত্যার বিচার না হওয়ায় সাম্প্রদায়িক শক্তি একের পর এক অপকর্ম করে যাচ্ছে। এই অপশক্তিকে তোষণ নয়, কঠোর হাতে দমন করতে হবে। হেফাজতে ইসলামসহ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।

বাম গণতান্ত্রিক জোট

জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির আগ মুহূর্তে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গ্রামে আক্রমণ প্রমাণ করে শাসকশ্রেণি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কায়েম থেকে অনেক পিছিয়ে আছে।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি

সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সুনামগঞ্জে প্রশাসনের নীরবতা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশের অবনতি ঘটাবে এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে।

সিপিবি

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম এক বিবৃতিতে বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে তোষণের যে নীতি বর্তমান সরকার নিয়েছে, তারই ফলে চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক শক্তি বেপরোয়া হয়েছে।

বাসদ

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান অভিযোগ করেছেন, এই মৌলবাদী হেফাজতকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক বর্তমান সরকার।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের কেন্দ্রীয় পাঠচক্র এক বিবৃতি বলেছে, ধর্মীয় ভাষাগত জাতিগত সংখ্যালঘু দরিদ্র জনগণের ভূমি থেকে উচ্ছেদ ও ভূমি দখলের লক্ষ্যে এ কাজ করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, পুলিশ নিষ্ফ্ক্রিয় থেকে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে এমন নৃশংস হামলা-আক্রমণের সুযোগ করে দিয়েছে।

হামলার পেছনের কুশীলবদের পরিচয় প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ বিবৃতিতে বলেছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের সময় সুনামগঞ্জে সংখ্যালঘুদের হিংস্র সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হওয়ার চেয়ে নিন্দনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক কিছু হতে পারে না। এই হামলার মাধ্যমে জাতির দুর্লভ এই মুহূর্ত এবং মুক্তিযুদ্ধের শাশ্বত চেতনাকে আবারও চ্যালেঞ্জ করা হলো।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি 

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, হেফাজত নেতারা এখনও ওয়াজের নামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ভিন্নধর্ম ও ভিন্নম্নমতের বিরুদ্ধে উস্কানি ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করে দেশে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছেন।

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

এছাড়া এ হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশের সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, সম্প্রীতি বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সদস্য সচিব মামুন আল মাহতাব, যুবমৈত্রীর সভাপতি সাব্বাহ আলী খান কলিন্স, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ সানী, ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক অতুলন দাস আলো, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজউল্লাহ, সহকারী সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জাহিন।

শুক্রবার উদীচীর দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ

নেক্কারজনক ওই হামলার ঘটনায় শুক্রবার দেশব্যাপী প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিকেল ৪টায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে সিলেট নগরী। সমাবেশ, মানববন্ধন, মিছিলসহ নানা কর্মসূচি থেকে এই ঘটনার জন্য হেফাজত নেতা মামুনুলকে গ্রেপ্তারের দাবি তোলা হয়েছে।

সিলেট

শাল্লার ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সিলেটে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা, অসাম্প্রদায়িক নাগরিক, হাওর উন্নয়ন পরিষদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন।

নাগরিক আন্দোলনের সংগঠন ‘দুষ্কাল প্রতিরোধে আমরা’ সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তারা শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার মদতদাতা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের গ্রেপ্তার দাবি করেন।

বক্তারা বলেন, ‘ওই গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার দুই দিন আগে পাশের দিরাই উপজেলায় সমাবেশে বক্তব্য দেন মামুনুল হক। তার উস্কানিতে এই হামলা হয়েছে। তাই মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘এই মুজিব বর্ষেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নদীতে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আলোচনায় আসেন মামুনুল। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও, গ্রেপ্তার না করে বরং তাকে সারাদেশে সমাবেশ করার জন্য সহযোগিতা করছে সরকার। সরকারি আস্কারাতেই মামুনুল হক ও হেফাজতে ইসলাম সারাদেশে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়ে দেশকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দিতে নিয়ে যাচ্ছে।’

তারা বলেন, ‘পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতেই গ্রামে হামলা হয়েছে কিন্তু তারা কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। ওই গ্রামের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের সবাই ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সমাবেশ থেকে তারা সারাদেশে ফেসবুকে পোস্টের দোহাই দিয়ে সাম্প্রদায়িক হামলার একের পর এক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।

 

Link copied!