‘মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২১, ০৮:৩৪ পিএম

‘মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে’

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্থপতি বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সহকর্মী তাজউদ্দীন আহমদ। তাঁর দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ছাড়া নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয় অর্জন সম্ভব হতো না। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস বিনির্মাণে তাজউদ্দিন আহমদকে যথাযথভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।’ শুক্রবার (২৩ জুলাই) '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্ব' শীর্ষক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারে বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। 

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ১৯৭৫-এর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের ৯৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আজ এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অন্যতম রচয়িতা মুক্তিযুদ্ধে তাজউদ্দিন আহমদের সহযোগী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম। নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আরও বক্তৃতা করেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মুক্তিযোদ্ধা এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউটের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফিকুর রহমান এমপি, মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত এমপি, তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এমপি, শহীদসন্তান অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী ও নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল। এছাড়া এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্মূল কমিটির নেতারা ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করেন।

সভায় বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে গঠিত মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার চরিত্রগতভাবে রাষ্ট্রপতিশাসিত হলেও কার্যত এই সরকারের প্রধান নিয়ামক শক্তি এবং মূল নেতৃত্বে ছিলেন তাজউদ্দিন আহমদ। তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহস এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি অঙ্গীকার তাকে রাষ্ট্রনায়কের মর্যাদা এনে দিয়েছে। একদিকে তিনি সরকারের ভেতর, দলের ভেতর, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামরিক ও সামাজিক শক্তির ভেতর বিভিন্ন মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্ব দক্ষতার সঙ্গে নিরসন করেছেন, অন্যদিকে ভারতের সার্বিক সহযোগিতা সমমর্যাদার ভিত্তিতে নিশ্চিত করেছেন এবং আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা অর্জন করেছেন।’

প্রধান অতিথির ভাষণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে তার অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দিন আহমদ যে শক্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বপ্রদানকারী সরকারের হাল ধরেছিলেন তা অতুলনীয়। তাজউদ্দিন আহমদ মুজিবনগরে সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যুদ্ধ পরিচালনা করে প্রমাণ করেছেন- মুক্তিযুদ্ধ ছিল রাজনৈতিক যুদ্ধ। তিনি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও আদর্শ নিয়ে সরকার পরিচালনা করেছিলেন। আমি ১৯৭২ সালে জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকের মুক্তিযুদ্ধে চক্রান্তের বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি (তাজউদ্দিন) বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাকের বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করত এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হতো। জাতির জন্য দুর্ভাগ্য আমরা যেমন এখনও বঙ্গবন্ধুকে পরিপূর্ণভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি সে রকম নিভৃতচারী, প্রচারবিমুখ তাজউদ্দিন আহমদকেও যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি।’

মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আমরা কি নতুন প্রজন্মকে তাজউদ্দিন আহমদকে জানাতে পেরেছি? তাজউদ্দিন আহমদ না থাকলে মুক্তিযুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হত না।’ 

তাজউদ্দিন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি এমপি বলেন, ‘তাজউদ্দিন আহমদ একজন নীরব কর্মী ছিলেন, যিনি নিজে প্রদীপের মতো জ্বলেছেন এবং বাংলাদেশকে সূর্যের আলোয় দীপ্ত করার চেষ্টা করে গেছেন অবিরাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালে তার অফিস কক্ষে একটি চেয়ারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি রেখেছিলেন, যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার সকল কাজের প্রেরণা। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী।’ 

সভায় বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে তাজউদ্দিন আহমদের বিশাল অবদান সঠিকভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি তার জীবনী সব স্তরের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

Link copied!