ফের যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে। রবিবার আবারও ডলারের দাম ৫০ পয়সা বেড়েছে। আন্তঃব্যাংকে এক ডলার ৯২ টাকায় বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গত মঙ্গলবার (৭ জুন) সর্বোচ্চ ৯২ টাকায় ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ঠিক একদিন পরই বুধবার (৮ জুন) হঠাৎ করে ডলারের দাম উল্টো ৫০ কমে প্রতি ডলার ৯১ টাকা ৫০ পয়সা বিক্রি করা হয়। এর ঠিক তিনদিন পর আবারও ডলারের দাম ৫০ পয়সা বেড়েছে।
এনিয়ে ডলারের বিপরীতে দুদিনে টাকার মান কমলো তিনবার। আর এক মাসে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৫ টাকা ৫ পয়সা কমেছে। চলতি বছর শুধু ডলারের বিপরীতে অন্তত ১০ বার মান হারিয়েছে টাকা। গত ২ জুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি মার্কিন ডলারের দাম ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করেছিল, যা তার আগে ছিল ৮৯ টাকা। পরে ডলারের বেঁধে দেওয়া দাম থেকে সরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দাম নির্ধারণে ব্যাংকগুলোর হাতেই ছেড়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাস মহামারিতে বিশ্বব্যাপী পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। সেই রেশ না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ সংকট আরও বাড়ে। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে মুক্তবাজার অর্থনীতি ডলারের দামও বৃদ্ধি পায়। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ডলারের বিপরীতে নানা দেশের মুদ্রার দরপতন হতেই আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, করোনার পরে আমদানি ব্যয় অধিক হারে বেড়ে গেছে। রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। বাজারের চাহিদা সামলাতে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দু-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ বছরের ৯ জানুয়ারি এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। পরে গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এপ্রিল আরও ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ১০ মে বাড়ে আরও ২৫ পয়সা। ১৬ মে বাড়ে ৮০ পয়সা। ২৩ মে বাড়ে ৪০ পয়সা। ২৯ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপরও বাজার স্থিতিশীল হয়নি।
পরে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (২৯ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল। তাতেও বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় সবশেষ মঙ্গলবার ২ টাকা ৫ পয়সা বাড়িয়ে ৯২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মূল্য ছিল। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৯২ থেকে ৯৩ টাকার মধ্যে কেনাবেচা করছে। খোলাবাজারে প্রতি এক ডলারের মূল্য রাখা হচ্ছে ৯৮ থেকে ৯৯ টাকা পর্যন্ত।