বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রচলিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১৪ থেকে ১৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংক পুরোপুরি ইসলামী ব্যাংকিং করতে চায়। ইতিমধ্যে দেশে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে আমানত ও ঋণের হিসাবে এক-চতুর্থাংশই ইসলামী ব্যাংকগুলোর দখলে। এখন পুরোদমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে ১০টি ব্যাংক।
দেশে ইসলামী ব্যাংক পরিচালনার কোনো আইন এবং পূর্ণাঙ্গ কোনো নীতিমালা নেই। আইন ছাড়াই বড় হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পরিধি।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকগুলো নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০০৯ সালের গাইডলাইনের মাধ্যমে। এ ছাড়া প্রতিটি ইসলামী ব্যাংক ক্ষমতাসম্পন্ন শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ব্যাংকগুলোর সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ডও বিষয়গুলো দেখাশোনা করে। তা সত্ত্বেও ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামো থাকলে এর নিয়ন্ত্রণ আরও সহজ হতে পারে।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের এমডি ও সিইও মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ জানান, বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থা আরও বিস্তারের সুযোগ আছে। কারণ বাংলাদেশ গত তিন দশকে ৬ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এবং এখানে ইসলামী অর্থব্যবস্থার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ইসলামিক ব্যাংকিং দেশে ও বিদেশে আরও টেকসই পরিচালনার জন্য স্বল্পমেয়াদি অর্থবাজারের সমর্থনের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ইসলামিক ব্যাংকিং আইন প্রয়োজন।
আসলে ইসলামী ব্যাংকিং হলো কাগজে-কলমে। প্রচলিত আইনেই ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বিষয়ে বলা আছে। এ কারণে ইসলামী ব্যাংকিং করতে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকিংয়ের জন্য একটি গাইডলাইন আছে। সেই গাইডলাইন অনুযায়ী ব্যাংক চলছে কি না তা দেখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মনিটরিং ব্যবস্থাও রয়েছে।
বাস্তবে ইসলামী ব্যাংকিং মানা হয় না। মানুষের ধর্মীয় অনুভূতির কারণে দেশে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বাজার বড় হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকের জন্য পৃথক আইন এখন সময়ের দাবি।
জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংক চালু হওয়ার এক বছর আগে ‘ইসলামী ব্যাংকিং আইন’ চালু করেছিল থাইল্যান্ড। অথচ বাংলাদেশে ৪০ বছর ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে এলেও এখন পর্যন্ত এসংক্রান্ত আইন চালু করা যায়নি। ২০১১ সালে অর্থবিষয়ক স্থায়ী কমিটির কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি খসড়া আইন চূড়ান্ত করে জমা দিয়েছিল। কিন্তু এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
ইসলামী ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রতিটি ইসলামী ব্যাংকের একটি শরিয়াহ বোর্ড আছে। আলাদাভাবে আইন করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং শরিয়াহ বোর্ডের ভূমিকা কী হবে—এসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে।
বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং চালু হয়। আরও অনেক ব্যাংক বিশেষায়িত শাখা ও উইন্ডো খোলার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এ ছাড়া অন্য অনেক প্রচলিত ব্যাংকও এখন ইসলামী ধারার সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।