মে ৩, ২০২৩, ১১:৫৬ পিএম
এপ্রিল মাসে দেশের পণ্য রপ্তানি আয় আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ কম হয়েছে। পোশাকশিল্পেই রপ্তানি কার্যাদেশ কমেছে ৩০ ভাগ! সব মিলিয়ে ৪৫ পণ্যে রপ্তানি আয় নেতিবাচক। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসের হিসেবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় যদিও বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, সদ্যসমাপ্ত এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। আগের বছরের এপ্রিলে রপ্তানি আয়ের এ পরিমাণ ছিলো ৪৭৩ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ইপিবির তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত বছরের নভেম্বর থেকে টানা চার মাস বাংলাদেশের রপ্তানি আয় অতিক্রম করেছে পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপর। তারমধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় আসে গত ডিসেম্বর মাসে ৫৩৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। পরে ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কমতে কমতে এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয় ঠেকেছে চার বিলিয়ন ডলারের নিচে; যা পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
জুলাই-এপ্রিল সময়ে মোট আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৭৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। পুর্ববর্তী অর্থবছরে ওই সময়ে এ আয় ছিলো ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার।
এপ্রিল ২০২৩ সালের কৌশলগত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৫০৫ কোটি ডলারের তুলনায় আয়ের পরিমান ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ নেতিবাচক।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, গেলো এপ্রিলে পোশাক শিল্পসহ মাত্র ১৪ ক্যাটাগরির পণ্য রপ্তানিতে আয় আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে। আর নেতিবাচক রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৫ টি পণ্যে।
তবে দেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। কিন্তু এ আয় টেকসই না হবার শংকায় আছেন পোশাক রপ্তানিকারকেরা।
বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, রপ্তানি কার্যাদেশ আগের তুলনায় কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কমেছে। আগামী জুলাই-আগস্ট মাসের আগে এ পরিস্থিতির উন্নতি হবার সম্ভাবনা নেই।
শহীদুল্লাহ আজীম ক্লাসিক ফ্যাশনস কনসেপ্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি বিষয়টির ব্যাখ্যা করে আরও বলেন, এখন যে প্রবৃদ্ধি দেখছেন তা শুধু মূল্য বাড়ার কারণে হয়েছে। কিন্তু ওভারঅল রপ্তানি কার্যাদেশ কমেছে। তার মানে পরিমাণ কমে গেছে। এ অবস্থায় অনেক পোশাক শিল্প টিকে থাকতে পারবে না। কারণ ক্রেতা পাওয়া দুস্কর হয়ে গেছে।
কেনো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিই এর জন্য দায়ী।
জানা যায়, জুলাই-এপ্রিল সময়ে পোশাক রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে তিন হাজার আটশ সাতান্ন কোটি ৭৫ লাখ ১০ হাজার ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এ আয় ১ দশমিক শুন্য পাঁচ শতাংশ বেশী। আর আগের বছর একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক শুন্য ৯ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ের মোট আয় ছিলো তিন হাজার পাঁচশ ছত্রিশ কোটি ২৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, নেতিবাচক রপ্তানি আয়ের খাত ও পণ্যসমূহের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে প্রাইমারি কমোডিটিজ, কৃষি পন্য, চিংড়ি, ফ্রোজেন ফিস, পাট ও পাটজাত পণ্য, প্রকৌশল পণ্য, সিরামিক পণ্য, নির্মাণ সামগ্রী, গ্লাস ও গ্লাসওয়ার, ফার্নিচার, অপটিক্যাল, বাইসাইকেল, হোম টেক্সটাইল, সিল্ক, ওল ও প্লাস্টিক পণ্য, ওষুধ এবং ফটোগ্রাফিক ও মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি।