সেপ্টেম্বর ৪, ২০২১, ১১:৪৫ এএম
অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) বুথ ঝুঁকিমুক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিক উদ্যোগ নিলেও ব্যাংকগুলোর সদিচ্ছার অভাবে এখনো তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। ‘সক’(সিকিউরিটি অপারেশন সেন্টার) বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয়ব্যাংক কয়েক দফা তাগাদা দিলেও দুএকটি ব্যাংক ছাড়া বেশির ভাগই কার্যকর করেনি। ফলে এখনও ঝুঁকিতে রয়েছে এটিএম সেবা।
মাঝে মধ্যেই বন্ধ থাকে এটিএম
দেশের ব্যাংকিং খাতে বিশেষ করে এটিএম বুথে সাইবার হামলার আশঙ্কায় চলতি বছরেই তিনদফা সতর্কতা জারি করা হয়। এই সময়ে এটিএম, কার্ড ও অনলাইন লেনদেনের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে দেশের ব্যাংকগুলো। যার ফলে দু-একটি ব্যাংক রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত এটিএম বুথ বন্ধ রাখছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ গ্রাহক।
৫ বছরে ১৭ টি দূর্ঘটনা
গত পাঁচ বছরে এটিএম বুথগুলোয় অন্তত ১৭টি চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত ছিল। এগুলো নিয়ে সিআইডি তদন্ত করছে। এতে সিআইডি দেখেছে, জালিয়াতির কোনো একপর্যায়ে ব্যাংককর্মীদের সংশ্লিষ্টতা বা উদাসীনতা রয়েছে। স্কিমিং (কার্ডে রক্ষিত তথ্য চুরি করা), ক্লোনিং (কার্ড নকল করা) করে কার্ডের গোপন তথ্য জেনে নিচ্ছে চক্রটি। এছাড়া বুথে গোপন ক্যামেরা স্থাপন, ম্যালওয়্যার ভাইরাস ও শপিংমলে অনলাইনে (পজ মেশিন) অর্থ পরিশোধে কার্ড রিডার বসিয়েও তথ্য চুরি করছে। পরে তারা কার্ড প্রস্তুতকারক বা ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সহায়তায় বিকল্প কার্ড তৈরি করে গ্রাহকের টাকা চুরি করছে।
মানসম্পন্ন এটিএম বুথ চালুর দাবি
বর্তমানে সারা দেশে ১১ হাজারের মতো এটিএম বুথ ও ৬১ হাজারের মতো পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিন রয়েছে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী অনেক ব্যাংক মানসম্মতএটিএম মেশিন আনে না। আবার অনেক ব্যাংক এখনো এটিএম সেবার জন্য মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ এক্সপিসহ ২০০০, ২০০৭, ২০১০ এই ধরনের পুরোনো অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছে, যা নতুন করে আপডেট নিচ্ছে না। ফলে সাইবার নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এতে হ্যাকাররা সহজেই এটিএমের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছে।
সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে Computer Incident Response Team (BGD e-GOV CIRT) বিজিডি ইগভ সিআইআরটি(কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির (ডিএসএ) পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ বলেন, অধিকাংশ ব্যাংকের এটিএম মেশিন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আনা হয় না। অনুমতি ছাড়া অন্য চ্যানেলে আসা মেশিনগুলোর বহুমুখী দুর্বলতা থাকে, যা এটিএম জালিয়াতির সুযোগ তৈরি করে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানতে হবে। পাশাপাশি ক্লিন ডিএনএস সার্ভার স্থাপন করতে হবে।
এছাড়া অনেক সময় এটিএম মেশিনের ডিসপ্লের ঠিক উপরে শক্তিশালী ক্যামেরা বসানো থাকে। যার মাধ্যমে আঙুলের মুভমেন্ট বোঝা যায়। অন্যদিকে এটিএমের ভেতরে বিশেষ একটি মেশিন বসিয়ে কার্ডের সব তথ্য সংগ্রহ করে আলাদা কার্ড বানিয়ে এবং ক্যামেরার মাধ্যমে নেওয়া পাসওয়ার্ড দিয়ে ওঠানো হয় টাকা। এদিকে রাস্তার সাথে অনেক ব্যাংক এটিএম বুথ স্থাপন করায় ভোক্তাদের নিরাপত্তার বিষয় আরও ভাবিয়ে তুলছে।
জালিয়াতিতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার
পাশাপাশি জালিয়াত চক্র সিম ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের মোবাইল ফোনে অর্থ উত্তোলনের এসএমএস বন্ধ করে দিচ্ছে। ফলে গ্রাহক নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে খোয়া যাওয়া অর্থের বিষয়ে থাকেন অন্ধকারে। একটি ব্যাংকের গ্রাহকের হিসাব থেকে ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনাও ধরা পড়েছে। এতে ওই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এখন মামলা চলছে। এছাড়া, একটি সুপার শপের কর্মচারী সেজে শরিফুল ইসলাম নামে একজন হাত ঘড়িতে সংযুক্ত বিশেষ মিনি কার্ড রিডারের মাধ্যমে গ্রাহকের কার্ডের (ম্যাগনেটিক স্ট্রিপযুক্ত কার্ড) অভ্যন্তরীণ তথ্যাবলি নিতেন। পরে বাসায় গিয়ে ল্যাপটপ এবং ডিভাইসের মাধ্যমে কাস্টমারের তথ্য ভার্জিন বা খালি কার্ডে স্থাপন করে ক্লোন কার্ড বানাতেন। পরে এটি দিয়ে কোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, জালিয়াতির প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে যুক্ত হয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ। চক্রটি গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা না নিয়ে সরাসরি এটিএম বুথে মজুত অর্থ তুলে নিচ্ছে। এজন্য ব্যবহার করছে বিশেষ ধরনের কার্ড। এ ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।