আগস্ট ১, ২০২২, ০৯:২১ পিএম
করোনার দাপট এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দেশের বাণিজ্যেও পড়েছে। রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের দামও ঊর্ধ্বমুখী। এতে রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাণিজ্য ঘাটতি তিন হাজার ৩২৫ কোটি ডলারে (তিন লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার বেশি) দাঁড়িয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। একই সময় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের ঘাটতিও সাড়ে ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) যে হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অস্বাভাবিক হারে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় বড় বাণিজ্য ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে এনে, রপ্তানি রেমিট্যান্স বাড়ানো জরুরি বলে অনেকে মত দিয়েছেন। তা না হলে সংকটে পড়বে অর্থনীতি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ তিন হাজার ৩২৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৯৪ দশমিক ৭০টাকা) হিসাবে দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ তিন লাখ ১৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকার বেশি। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার।
দেখা গেছে, আগের অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে আমদানি বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আলোচিত সময়ে রপ্তানি থেকে দেশ আয় করেছে চার হাজার ৯২৫ কোটি ডলার। এ সময়ে পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। আমদানি ব্যয় থেকে রপ্তানি আয় বাদ দিলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩২৫ কোটি ডলার।
এ সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। গেল অর্থবছরে পুরো সময়ে সেবা খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৯৯৮ কোটি ডলার। অন্যদিকে সেবা খাতে দেশের ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৩৮৫ কোটি ডলার। সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮৭ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৩০২ কোটি ডলার।
চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও বড় ধরনের ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৬৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল মাত্র ৪৫৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৩৮ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে ৯২৭ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।
যদিও দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে ৩৩৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরে তা বেড়ে ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ ডলারে উঠেছে।