পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান আন্দোলনের মাঝেই আবারও পিছিয়ে গেল পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। বুধবার (১ নভেম্বর ) দুপুরে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন মজুরি বোর্ডের ডাকা পঞ্চম সভাতেও চূড়ান্ত হয়নি মজুরি।
গাজীপুর, সাভার ও ঢাকার মিরপুরে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান আন্দোলনের এ সভায় মালিক এবং শ্রমিক প্রতিনিধির প্রস্তাবিত মজুরির পার্থক্য কমিয়ে নতুন প্রস্তাব দেওয়ার কথা থাকলেও নতুন মজুরির প্রস্তাব দেয়নি মালিকপক্ষ। তবে বেতন বৃদ্ধি এবং গ্রেড কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তে একমত হয়েছে উভয় পক্ষ।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মালিকপক্ষ নতুন মজুরি প্রস্তাব করবেন বলে জানিয়েছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং জেলা ও দায়রা জজ লিয়াকত আলী মোল্লা।
উভয় পক্ষের সাথে সভা শেষে লিয়াকত আলী মোল্লা এক প্রতিবেদনে বলেন, “ বুধবার ( ১ নভেম্বর) মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রমিক পক্ষের দাবি ছিল ৭টি গ্রেড থেকে কমিয়ে ৫টি গ্রেড নির্ধারণ করার। সেখানে মালিকপক্ষ সম্মত হয়েছে।
সে জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,৭টি গ্রেডের স্থলে ৫টি গ্রেড করব। আরেকটি বিষয় হলো-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছে মালিকপক্ষ। তাদের প্রতিনিধি আগামী সভায় লিখিতভাবে জমা দেবেন। মালিকপক্ষের প্রস্তাবনা দেখে শ্রমিকপক্ষ তখন সিদ্ধান্ত নেবেন, তিনি সেই প্রস্তাবে রাজি হবে বা কী করণীয়। যে জন্য আজকে আমরা শ্রমিকপক্ষের সিদ্ধান্ত পরিষ্কার জানতে পারিনি।”
তিনি আরও বলেন, ‘এখন শ্রমিক আন্দোলন হচ্ছে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আরও একটি সভা আহ্বান করব। এ জন্য আমি শ্রমিক ভাইবোনদের বলব-তারা যাতে কারও উসকানিতে কান না দিয়ে, কলকারখানায় ফিরে যায় এবং কাজ করে। কারণ শিল্পটা রক্ষা করাটাও তাদের দায়িত্ব।’
মালিকপক্ষের প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আগে আমরা মজুরির যে প্রস্তাব জামা দিয়েছিলাম। ওনারা (মজুরি বোর্ড) আমাদের অনুরোধ করেছেন, এখান থেকে আমাদের বাড়াতে হবে। আমি বলেছি, হ্যাঁ আমরা অবশ্যই বাড়াব। সে বিষয়ে আমরা রাজি হয়েছি। কতটুকু বাড়াব, সেটা আমরা আগামী সভায় লিখিত প্রস্তাবনা আকারে তাদের কাছে দেব। তখন তারা সেটি জানতে পারবে। এতটুকু বলতে পারি আগের প্রস্তাব থেকে অনেক দূর বাড়াব।”
শ্রমিক আন্দোলনে বহিরাগত রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “অনেক শ্রমিক গণমাধ্যমে বলছে, আট হাজার টাকা পায়, এটায় তার চলে না। আমি প্রমাণ করে দিতে পারি, এই লোকগুলো কখনো শ্রমিক না। কারণ ৮ হাজার টাকা যে শ্রমিকেরা পায়, তারা কখনো কিছু বলে না।
যারা ৮ হাজার পায়, তারা একদম নতুন, তার একটা চাকরির দরকার, সে ৮ হাজার টাকায় ঢুকেছে। অতিরিক্ত সময় যোগ করে মাস শেষে ভালো একটা টাকা নিয়ে বাড়িতে যায়। অতএব এই আন্দোলন যারা করতেছে, তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করতেছে এবং আমরা জানি কারা কারা এর সাথে জড়িত আছে।”
শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি প্রতিবেদনে বলেন, “এখানে ৫ কোটি লোকের জীবনযাত্রা জড়িত। সে জন্য আমরা চেষ্টা করছি, বর্তমান বাজার প্রেক্ষাপটে আগামী ৫ বছরের জন্য একটি ন্যায্য মজুরি আদায় করার। আজ মালিকপক্ষ তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। আমরা ভালো একটি মজুরির দিকে যাচ্ছি। আগামী সভায় শ্রমিকদের জন্য একটি ভালো মজুরি আসছে।”
সভা চলাকালীন বোর্ডের সামনে মজুরি বৃদ্ধি ও পুলিশের গুলিতে রাসেল হাওলাদার ও ইমরান নামে দুই শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে পোশাক শ্রমিক সংগঠনগুলো।
সেখানে মজুরি বৃদ্ধিতে পোশাক শ্রমিক আন্দোলনের সমন্বয়ক গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘আজকে শ্রমিকদের কেউ বলছেন মজুরি হতে হবে ২৫ হাজার টাকা, কেউ বলছেন ২৩ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারের শ্রমিক প্রতিনিধি ২০ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের কথা বলেছেন। তিনি মূলত সরকার ও মালিকপক্ষের স্বার্থ দেখছেন।’
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম বলেন, “সরকার ও বিজিএমইএ শ্রমিক আন্দোলন দমনের যে নীতি নিয়েছে, তাতে গার্মেন্টস সেক্টরে স্থিতিশীলতা আসবে না।”