আগস্ট ১৪, ২০২৩, ০২:২৬ পিএম
সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংকের ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা প্রদান করা হয়েছে । তারা জানিয়েছেন নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সাপেক্ষে কোনো ধরনের বিনিয়োগ করবেন না ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংকের ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সি আর আর) প্রয়োজন নগদের ৪ শতাংশ এবং লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও (এল সি আর) প্রয়োজন আমানতের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেছেন গত বছর ডিসেম্বর থেকে ইসলামী ব্যাংকের সি আর আর এবং এল সি আর ধরে রাখতে ব্যার্থ হয়েছে ।
গত ৩০ জুন ইসলামী ব্যাংকের সি আর আর ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। কিন্তু তাদের এলসি ঠিক ছিল না । তাদের এই ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২.৯ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
গত বছরের ডিসেম্বরে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে চলতি ( ২০২২) বছরে ইসলামী ব্যাংক নিয়ম লঙ্ঘন করে ৯ কোম্পানিকে ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে । সেই অভিযোগ তদন্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ বলেন তারল্য সংকটে ভুগছে আটটি ব্যাংক। বেসিক ব্যাংক,পদ্ম ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংক বাকি পাঁচটি শরীয়াহ ব্যাংক। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ইকোনমিক্যাল নয় বরং পলিটিক্যাল। এতে দেখা যায় অর্থনীতির বাজার অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে নয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত মতে চলে ।
গত ১৮ জুন (২০২৩-২৪) অর্থবছরের জন্য নতুন মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে এ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন এবারের মুদ্রানীতি বিগত মুদ্রানীতি থেকে আলাদা। আগেকার মুদ্রানীতি মূলত টাকা সরবরাহের দিকে জোর দেওয়া হতো। কিন্তু এবারের মুদ্রানীতি টাকা সরবরাহ নয় বরং মূল্যস্ফীতি কমাতে সুদহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে ।
মহামারির পর বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধতে তা পুনরায় বাধাগ্ৰস্ত হয়। যার ফলে চলতি বছরের হিসাবে ঘাটতি, টাকার অবমূল্যায়ন, এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে।এই দুরবস্থা কাটাতে আই এম এফ থেকে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ। আই এম এফের নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকের সুদ হারের সীমা প্রত্যাহার, বৈদেশিক মুদ্রার ভাসমান বিনিময় হার ,খেলাপি ঋণ কমানো ,জ্বালানি তেলের ভর্তুকি কমাতে হবে। এর বাইরে ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংস্কার,কর ব্যাবস্থাপনাকে দক্ষ করে কর আদায় বাড়াতে হবে ।
তবে নিয়ম মানার শর্ত দিয়েও ব্যাংক তারল্য হ্রাস করার ক্ষেত্রে, এইসব নিয়ম মানার ব্যাপারে কোনো নিয়ম জারির কথা বলেনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। আই এম এফের শর্তানুযায়ী রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ডলার থাকতে হবে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন এ নিয়মকে শিথিল করা হয়েছে। কেননা বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি রিজার্ভের টাকা ধরে রাখলাম আর গুরুত্বপূর্ণ খাতে টাকা দিলাম না তাতে কোনো লাভ আসবে না । রোজার সময় পণ্য আমদানি কিংবা বিদ্যুৎতের জ্বালানি আমদানি এসব ব্যাপারে টাকা ধরে রাখা মানে দেশে সংকট সৃষ্টি করা। প্রয়োজনমতো রিজার্ভ থেকে টাকা খরচ করা হবে ।
ঋণের ব্যাবহার সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক, ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে সত্য, কিন্তু সংকটজনক জায়গা যায়নি। তবে ২০২৬ সালের পর প্রতি বছর বাংলাদেশকে চার থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ২ পারসেন্ট সুদসহ ফেরত দিতে হবে । ঋণের সঠিক প্রয়োগ যদি নাহয় তবে ফের সংকটে পড়বে বাংলাদেশ।