২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটকে ‘বাস্তবায়ন সম্ভব’ মন্তব্য করে সরকারকে ধন্যবাদ দিলেও এর জন্য সুশাসন ও সঠিক নজরদারি দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সেই সঙ্গে ক্ষেত্র বিশেষে কর কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ সীমিত রাখার দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম।
বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় করা সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, “কর কর্মকর্তাদেরকে কর ফাঁকি বের করতে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর ফলে আইনের অপপ্রয়োগ হয়। সরকারি কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছা ক্ষমতা কমানোর জন্য পুরস্কার প্রথা বাতিল করে বিকল্প প্রণোদনার ব্যবস্থার জন্য আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটে এর প্রতিফলন দেওয়া যায়নি। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।”
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আরও বলেন, “কর আপীলাত ট্রাইব্যুনালে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন করা এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিচার বিভাগীয় সদস্যকে ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট করার জন্য আমরা আহ্বান জানিয়েছিলাম। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্যকে প্রেসিডেন্ট করার বিধান করা হয়েছে। এ প্রশ্নাবটি পুনর্বিবেচনার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।”
এই দাবির স্বপক্ষে মাহবুবুল আলম বলেন, “অধিকাংশ সময় দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের বিপক্ষে যে অভিযোগ আনা হয় সেগুলোর বিচারই যদি রাজস্ব কর্মকর্তা করে তাহলে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিচারের সঙ্গে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বা চেম্বারের কোনও সদস্যকে সম্পৃক্ত করা হয়না। ফলে সেই বিচারটি হাইকোর্টে গিয়ে পুনরায় আপিল করতে হয়। ফলে কোন ফলাফল পেতে কয়েকবছর লেগে যায়। সার্বিক বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারককে প্রেসিডেন্ট করলে এই বিষয়টি সহজ হয়।”
এদিকে কর কর্মকর্তাদের পুরষ্কারের বিপরীতে কেমন প্রণোদনা দেওয়া দরকার সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে কর ন্যায়পাল পদ্ধতি আগে ছিল যে কারণে নতুন করে সেই পদটি আনা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আরও বলেন, “রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এডিআর সিস্টেম কার্যকর করার পাশাপাশি কর ন্যায়পাল নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। পরিশেষে বলতে চাই, যথাযথ বিনিয়োগ ও শিল্পোন্নয়ন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। রাজস্ব নীতিতে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরি যাতে বিনিয়োগকারীগণ আস্থার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারে। এজন্য মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যে সু-সমন্বয় রাখা জরুরি বলে আমরা মনে করি। বর্তমান বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সংকটের মধ্যে হাজারও সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে উন্নয়ন, জনকল্যাণমুখী ও ব্যবসা-বান্ধব বাজেট দেওয়ার জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “অর্থবিল এবং বাজেট সম্পর্কিত আয়কর, মূসক ও শুল্ক প্রজ্ঞাপনগুলি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এফবিসিসিআই-এর সদস্য সংগঠন থেকে আমরা তাদের মতামত চেয়েছি। সংগঠনের মতামত পেলে আলোচনা করে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর এফবিসিসিআই-এর বাজেট পরবর্তী সুপারিশ সরকারের নিকট উপস্থাপন করা হবে।”