সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩, ০৮:২৫ পিএম
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আউশ ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না, এক্ষেত্রে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ৯-১০ লাখ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য বিশ্লেষণ করে আউশ উৎপাদনের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর ডিএইর দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত ৯৫ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে, যা থেকে ২৮. ৭৪ লাখ টন চাল (ধানের উৎপাদন চালে রূপান্তর করে হিসাব রাখা হয়) পাওয়া গেছে। এ বছর ৩৯.৭৭ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার ইঙ্গিত আগে থেকেই ছিল। মোট ১৩.৯৫ লাখ হেক্টর জমি আউশ চাষের আওতায় আনার পরিকল্পনা ছিল সরকারের। তবে ১০.৫৪ লাখ হেক্টরের বেশি আবাদ করা সম্ভব হয়নি। গত ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০.০৪ লাখ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। মাঠে ফসল রয়েছে ৫০ হাজার হেক্টর।
এ বছর হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ২.৮৬ টন। এ হিসাবে আর ১.৪৩ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে। সেক্ষেত্রে মোট উৎপাদন গিয়ে ঠেকবে ৩০ লাখ টনের মতো।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ থেতে ১০ লাখ টন চাল কম উৎপাদন হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আউশ অনেকটা বৃষ্টি নির্ভর ফসল। এ মৌসুমে প্রয়োজনের সময় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল খুবই কম। যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ব্যাহত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএইর পরিচালক (সরেজমিন শাখা) তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী দ্য রিপোর্টকে জানান, “বৃষ্টি কম হওয়াতে বীজতলা ভালো হয়নি। এজন্য আমরা আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করতে পারিনি। এজন্যে স্বাভাবিকভাবেই ফলন কিছুটা কম হবার কথা। এছাড়া ধান কাটার আগে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চট্রগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব কারণেই ফলন কম হয়েছে।”
আউশ ধান চৈত্র-বৈশাখ মাসে বপন করা হয় এবং আষাঢ়-শ্রাবণে কাটা হয়। হাইব্রিড ধানের উৎপাদনশীলতা বেশি হলেও উফশী জাতগুলোরই চাষ হয়েছে বেশি।
হাইব্রিড জাতের আউশ ধান আবাদ হয়েছে ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ৩.৭১ টন ফলনে হাইব্রিড জাতের ধান থেকে ২.১৬ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে।
উচ্চ ফসলশীল জাতের আউশ ধান চাষ হয়েছে ৯.৩৭ লাখ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ২.৮৮ টন ফলনে উফশী জাত থেকে এসেছে ২৫.৮৩ লাখ টন।
আর স্থানীয় জাতের উফশী চাষ হয়েছে প্রায় ৫৬ হাজার হেক্টর জমিতে। এসব জাতের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ১.৫৩ টন। স্থানীয় জাতগুলো থেকে উৎপাদন হয়েছে ৭৫ হাজার টন চাল।
হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে ৯৫ শতংশের বেশি। আর স্থানীয় জাতের ৮৮.৬৭ ভাগ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, “আউশ মূলত সরাসরি বীজ ছিটিয়ে বোনার ধান কিন্তু আমাদের দেশে বীজতলা তৈরি করে চারা বোনা হয়। তবে এবার যখন বীজতলা তৈরি করা হয় তখন খরা ছিল। এটিই ফলন কমে যাবার মূল কারণ।”
“তবে যারা সেচ দিতে পেরেছে তাদের ফলন ভালো হয়েছে। তবে সব কৃষকের সেচ দেওয়ার মতো অতিরিক্ত অর্থ ছিল না”
লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও উৎপাদন থাকছে গতবছরের মতোই। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আউশের উৎপাদন ছিল ২৯ লাখ টন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ৩ কোটি ৯১ লাখ টন চাল উৎপাদন হয় যার মধ্যে আউশ ছিল ২৯.০১ লাখ টন, বোরো ২ কোটি ৭ লাখ ৬৮ হাজার টন এবং আমন ১ কোটি ৫৪ লাখ ২৬ হাজার টন।