আইএমএফ থেকে এক-দুই বিলিয়ন ডলার আনতে জান বের হয়ে যায়: অর্থ উপদেষ্টা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০৫:১৭ পিএম

আইএমএফ থেকে এক-দুই বিলিয়ন ডলার আনতে জান বের হয়ে যায়: অর্থ উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশের বছরে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। তবে আইএমএফ থেকে এক-দুই বিলিয়ন ডলার আনতে জান বের হয়ে যায়।’

সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম–সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) মিলনায়তনে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা ‘নেভিগেটিং ক্লাইমেট ফাইন্যান্স: মিডিয়া রিপোর্টিং’। পিকেএসএফ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করেছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। দুর্যোগ মোকাবিলায় বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হয়। অথচ আইএমএফ থেকে এক-দুই বিলিয়ন ডলার আনতে আমাদের জান বের হয়ে যায়। সামনে ৫ বিলিয়ন ডলারের জন্য আলোচনায় বসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ দুই ধরনের— প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট। কিন্তু মানবসৃষ্ট দুর্যোগের পরিমাণও কম নয়। প্রকৃতির ক্ষতির বড় একটি অংশও মানুষের কারণে হচ্ছে। তাই সমস্যার মূল জায়গায় সমাধান আনতে হবে।’

অর্থ উপদেষ্টার মতে, জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় পাঁচটি পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এগুলো হলো— বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক, প্রতিষ্ঠান, অর্থের সংস্থানকারী এবং জনগণ। তিনি বলেন, ‘আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছানোর আগেই সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসেন। বাংলাদেশ সেই দিক থেকে এগিয়ে আছে। দুর্যোগে স্থানীয় মানুষ নিজেরা লড়াই করে। এটিকে কাজে লাগাতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে।’

সাংবাদিকদের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘জাপানে ছাত্রছাত্রীরা দুর্যোগ নিয়ে সচেতন থাকে। আমাদেরও ছোটবেলা থেকে শিশুদের দুর্যোগ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। মিডিয়াকে মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে। তবে জলবায়ু নিয়ে কথাবার্তা বেশি হলেও কাজ কম হয়।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান।’ তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু বাড়ছে জলবায়ুর কারণে, সিলেটে পানি বৃদ্ধি থেকে শুরু করে মাতৃমৃত্যু—এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েনি। কিন্তু এসব গল্প আমরা বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরতে পারছি না। ফলে জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ পাওয়ার কেস শক্তিশালী হচ্ছে না।’

ইআরডির সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ আনার জন্য বাংলাদেশ নিয়মিত চেষ্টা করছে। কিন্তু এর জন্য আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ক্ষতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে হবে। এখানে সাংবাদিকদের বড় ভূমিকা রয়েছে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান জাকির আহমেদ খান। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের জীবিকা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা—সবকিছুই ঝুঁকিতে। এই বাস্তবতায় সাংবাদিকরা যদি শক্তিশালী কণ্ঠ তৈরি করেন, তাহলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় হবে।’

এ ছাড়া পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলু কাদের বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের লক্ষ্য হলো সাংবাদিকদের জলবায়ু অর্থায়নের জটিল কাঠামো বুঝতে সহায়তা করা, যাতে তারা রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

তিন দিনব্যাপী এ কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৬০ জন সাংবাদিক অংশ নিচ্ছেন। তারা জলবায়ু অর্থায়ন, বৈশ্বিক তহবিলের কাঠামো, অর্থ আহরণের চ্যালেঞ্জ ও মিডিয়ার দায়িত্ব নিয়ে প্রশিক্ষণ পাবেন।

Link copied!