জুন ১২, ২০২৪, ১১:১৬ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কোরবানির পশুর কৃত্রিম সংকট ঠেকানোর পাশাপাশি কেনাবেচায় ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত ও পশুবাহী যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে সতর্ক নজরদারি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘ঈদুল আজহার প্রস্তুতিমূলক সভায়’ পশু কেনাবেচায় অনলাইন মার্কেটে মনিটরিং জোরদারসহ কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহন, হাট ও অনলাইন মার্কেট ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কোরবানির পশুর চামড়া ব্যবস্থাপনা বিষয়ে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার (১২ জুন) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এসব সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সভাপতিত্বে সভায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবগণ, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিএমইএ`র প্রতিনিধি, বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার প্রধান ও প্রতিনিধিগণ সভায় অংশগ্রহণ করেন।
সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানায়, এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর যথেষ্ট যোগান রয়েছে। উদ্বৃত্ত পরিমান কোরবানির পশুর সরবরাহ থাকায় কোন সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশংকা নেই। বাজার ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে যৌক্তিক মূল্যে কোরবানির পশুর ক্রয়-বিক্রয় হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। কোনরূপ কৃত্রিম সংকট যেন তৈরি না হতে পারে সেলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহন, হাট ও অনলাইন মার্কেট ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত:
১. কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা ও কেনাবেচায় যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করতে সতর্ক নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে। অনলাইন মার্কেটের মনিটরিং জোরদার করতে হবে।
২. কোরবানির পশুবাহী যানবাহনের চলাচল সুশৃঙ্খল ও নির্বিঘ্ন রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এলক্ষ্যে মাঠ প্রশাসনসহ আন্তঃদপ্তর সমন্বয় জোরদার করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরেজমিন তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।
৩. নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশুর হাট স্থাপন এবং যত্রতত্র হাট গড়ে ওঠার প্রবণতা রোধকল্পে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো পুলিশ বিভাগের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করবে।
৪. কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে।
৫. কোরবানির পশুর হাটসহ পশু পরিবহন, ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা ও যেকোনও ধরনের প্রতারণারোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।
নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি ও আবর্জনা অপসারণ বিষয়ক সিদ্ধান্ত:
১. স্থানীয় সরকার বিভাগ হতে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানির বিষয়ে যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে তা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
২. ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে প্রত্যক্ষ ও সরেজমিন তত্ত্বাবধানে স্বল্পতম সময়ে শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করতে হবে এবং পূর্বপরিকল্পনামাফিক পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও বর্জ্য পরিবহনকারী গাড়িসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে হবে।
কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সিদ্ধান্ত:
১. স্থানীয় প্রশাসন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করে চামড়ার মূল্য নির্ধারণসহ চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সার্বিকভাবে বিবেচনা করে স্থানীয় বাস্তবতার নিরিখে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।
২. দেশের সব প্রান্ত থেকে ঢাকায় একত্রে সব চামড়া প্রবেশ করে পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি না হয় সেজন্য ঈদ পরবর্তী ন্যূনতম ১০ দিন কোনও প্রকার চামড়া ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। চামড়া সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে।
৩. সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর চামড়া সংরক্ষণের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাবে।
এই সভায় আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর সহজলভ্যতা, পরিবহন, হাট ব্যবস্থাপনা, অনলাইন মার্কেট মনিটরিং, ঈদযাত্রা, কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চামড়া সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ঈদ ফিরতি যাত্রাসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি, কার্যক্রম ও আন্তঃদপ্তর নিবিড় সমন্বয়, ঈদের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ, মজুদ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।