ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩, ০৪:০৬ পিএম
নির্বাচনী প্রচারণায় ভিন্নতা আনতেই টি-শার্ট ও ক্যাপকে প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যাবহার করছেন প্রার্থীরা। আর এই চাহিদায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছে টি শার্ট ও ক্যাপের ব্যবসায়ীরা। স্বল্প সময়ে হঠাৎ কাজের চাপ বাড়লেও বাড়তি আয়ের উৎসে খুশি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
নৌকা ও ঈগলের চাহিদা বেশি
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় রাজধানীর সবচেয়ে বড় ক্যাপের পাইকারি মার্কেট সিদ্দিক বাজারের রোজলীন ভিসতায় চলছে নির্বাচনী ক্যাপ কেনাবেচা। এ সময় বাংলাদেশ ক্যাপের ব্যবস্থাপক মো. সুজন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে আগের চেয়ে বিক্রি বেশি হচ্ছে।
তবে প্রচারণার ক্যাপগুলো বিক্রির ক্ষেত্রে তিনি বলেন, এগুলো শ ও হাজার হিসেবে বিক্রি হয় তবে সর্বনিম্ন একশ পিস অর্ডার করতে হয়। শুধু এক কালারের ক্যাপ প্রিন্ট ছাড়া নিলে সর্বনিম্ন দাম পড়বে ২০ টাকা। এর চেয়ে ভালো নিলে পড়বে ২৫ টাকা এবং আরেকটু ভালো নিলে পড়বে ৪০ টাকার মতো।
প্রিন্টসহ কত খরচ পড়বে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক কালার ক্যাপে যেকোনো প্রতীক কিংবা মার্কা দিয়ে প্রিন্ট করলে খরচ পড়বে মাত্র ৫ টাকা আর ডিজিটাল প্রিন্ট করলে পড়বে ১২ টাকা তবে পরিমাণ বেশি হলে ১০ টাকায় ও দেয়া যাবে। এবার সবচেয়ে বেশি নৌকা ও ইগলের ক্যাপ অর্ডার হয়েছে বলে জানান তিনি।
নির্বাচন ছাড়া অন্যান্য সময় কেমন চাপ থাকে এবং কী করেন সেই বিষয় জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নে সারা বছর যে সভা-সমাবেশ ও সম্মেলন হয়ে থাকে সেগুলোতে কাজ করা হয়। দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ করা হয়। পাশাপাশি স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানের অর্ডার অনুযায়ী ক্যাপ সরবরাহ করেন তারা।
বেড়েছে পণ্যের দাম
প্রিন্টের সরঞ্জাম ও কাপড়ের দাম বৃদ্ধিতে বেড়েছে টি-শার্ট ও ক্যাপের দাম। তবে প্রচারণায় কার্পণ্য করছেন না কোন প্রার্থী। গত দেড় বছরে সব কিছুর দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তাই এবারে নির্বাচনী প্রচারণায় বেড়েছে খরচ। তবুও ভালো ব্যবসা করার আশাবাদী মালিকরা।
বঙ্গবাজারের সিটি প্লাজার কবির গার্মেন্ট-এর স্বত্বাধিকারী মো. কবির হোসেন দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকাটা খুব কঠিন তবে নির্বাচনী বেচাবিক্রি ভালো। এখন টি-শার্টগুলো বেশি চলছে। নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন মিটিং-মিছিল-সমাবেশে দলীয় লোকজন তাদের ছবি পদ-পদবি দিয়ে টি-শার্ট প্রিন্ট করে নিয়ে যায় আর নির্বাচনের সময় চলে মার্কা দিয়ে।
কোন টি-শার্ট কেমন দামে বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলে, আমার এখানে সর্বনিম্ন টি-শার্ট শুরু হয় এক কালার যেকোনো (গোল গলা) ৫০ টাকা থেকে আর (কলার) শুরু ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। সবচেয়ে বেশি চলে ৫০ টাকার গেঞ্জিগুলো।
৫০ টাকার একটি টি-শার্টে ছবি কিংবা মার্কা দিয়ে প্রিন্ট করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৬৫ টাকার মতো আর ১০০ টাকার টি- শার্ট প্রিন্ট ফুল খরচ পড়বে ১১৫ টাকা। তবে পরিমাণ বেশি হলে কমবে খরচ।
বাড়তি চাপে বেড়েছে মৌসুমী শ্রমিকদের চাহিদা
হঠাৎ কাজের চাপ বাড়ায় বাড়তি মৌসুমী শ্রমিকের পাশাপাশি প্রিন্টিং মেশিনও মেরামত করতে দেখা গেছে ক্যাপ ও টি শার্ট ব্যবসায়ীদের। দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ ও ঝামেলা এড়াতে মেরামত করতে দেখা গেছে প্রিন্টিং ছাঁচগুলো। আর দরকারি সরঞ্জাম, কাপড়-কালি ও মৌসুমী শ্রমিক মজুদের প্রস্তুতি চলছে তাদের। প্রিন্টের কারখানাগুলো ঘুরে দেখা গেছে অনেকটাই ব্যস্ত সময় পার করছেন কারখানা শ্রমিকরা। এবারে সবচেয়ে বেশি নৌকা প্রতীকের কাজ পেয়ে তাদের চোখে মুখে ছিল নির্বাচনী আমেজ।
প্রিন্টের কারিগর মো. রায়হান দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে জানান, অন্যান্য সময় কাজের চাপ কিছুটা কম থাকলেও নির্বাচন আসলে কাজের চাপ বাড়ে।
তিনি বলেন, এবার আওয়ামী লীগ সরকারের কাজ বেশি করেছি আমরা। ইলেকশনের সময় এই কাজ করতে খুব ভালো লাগে। আমার হাতের গেঞ্জিগুলা মানুষ পরবো এটাই তো আনন্দ।
নির্বাচনী প্রচারণার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এই প্রিন্টিং ব্যবসা। প্রতি নির্বাচনের আগে কর্মব্যস্ত দিন যাপন করেন মালিক-শ্রমিক সবাই। নির্বাচনে হার-জিত থাকে। কেউ বিজয়ের কান্নায় কাঁদে, কেউ হারের। কিন্তু এই ব্যবসার সাথে জড়িতদের চেহারায় ক্লান্তি মাখা হাসি লেগেই থাকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
নির্বাচনী প্রচার কৌশল হিসেবে যে ব্যাপারটা সামনে আসে সেটি হলো ভোটারদের দ্বারে যাওয়া সভা-সমাবেশ, মিছিল, উঠান বৈঠক, মাইকে প্রচারণা। তবে অনলাইনের কল্যাণে এবার ভিন্ন মাত্রা যোগ হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণায়। ভোটারদের দোরগোড়ায় না গিয়েও প্রার্থীদের ভোটের বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে ভোটারদের হাতে হাতে।