ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম
বাঙালি নারীর প্রিয় পোশাক শাড়ি। বাংলাদেশি নারীদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও শিল্পের ধারক ও বাহক বলা যায় শাড়িকে। দেশের প্রতিটি অঞ্চল স্বতন্ত্র ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ। এসব অঞ্চলে লুকিয়ে রয়েছে জনপ্রিয় শাড়ির ইতিহাস।
গেল বৃহস্পতিবার ভারতের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে করা একটি পোস্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির উৎপত্তি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এরপরই বিতর্কের সূত্রপাত। এ ঘটনায় বাংলাদেশি নেটিজেনদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায় যা সর্বজনবিদিত। আসুন জেনে নেওয়া যায় বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে ঐতিহ্যবাহী কোন শাড়িগুলো পাওয়া যায়।
ঢাকাই জামদানি শাড়ি
ঐতিহ্যবাহী শাড়ির প্রথমেই রয়েছে ঢাকাই জামদানি। এই শাড়ি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।ঢাকাকে জামদানির আদি জন্মস্থান বলা হয়। শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ, নোয়াপাড়া ও এর আশপাশের এলাকায় তাঁতিরা ঢাকাই জামদানি শাড়ি বুনেন। নিজস্ব ও স্বতন্ত্র ডিজাইনের অধিকারী এই শাড়ি বিশ্বজুড়ে খ্যাতি পেয়েছে। কার্পাস তুলা থেকে পাওয়া সুতা দিয়ে এই শাড়ি তৈরি হয়। সূক্ষ্ণ কাজ আর রুচিশীল ডিজাইনের জন্য এর শাড়ি বেশ দামিও হয়। বাঙালির তাঁতিরা নিখুঁত হাতে জামদানি শাড়ি বুনেন। যত নিখুঁত কারুকাজ, ইউনিক এবং মসৃণ হয়, ততই দাম বেশি হয় জামদানি শাড়ির।
মসলিন
ঢাকাই মসলিন হচ্ছে ফুটি কার্পাস তুলায় তৈরি এক ধরণের সূক্ষ্ম ও পাতলা কাপড়। ১০০% সূতি এই কাপড়ের সূতা চরকার মাধ্যমে তৈরি করে গর্ত বা পিট তাঁতে বুনন করা হয়।
চরকায় কাটা বলে এই কাপড় অসমান, খুব মসৃণ, পাতলা, স্বচ্ছ, ওজনে হালকা এবং পরিধানে বেশ আরামদায়ক।
ভালো মানের এই ফুটি কার্পাসটি মেঘনা নদীর পশ্চিম তীরে ঢাকা জেলার আশেপাশে সোনারগাঁ, ধামরাই, কাপাসিয়া, কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি, বাজিতপুরসহ কয়েকটি স্থানে পাওয়া যায়। দেশে, বিদেশে ব্যাপক সুনাম আছে এই শাড়ির। এই শাড়ি পেয়েছে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি।
টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি
টাঙ্গাইল এলাকা থেকেই তাঁতের শাড়ির প্রচলন। ঐতিহ্যবাহী মসলিন শাড়ির তাঁতিদের হাত ধরেই শুরু হয় টাঙ্গাইল শাড়ির বুনন। টাঙ্গাইলে তৈরি বলেই এটি পরিচিতি পায় টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি নামেই। এই শাড়ি বেশ আরামদায়ক। তাই যেকোনো বয়সের নারীদের পছন্দ টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ি। বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও এই শাড়ি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই শাড়ির উৎপত্তিস্থল টাঙ্গাইল হলেও বর্তমানে সারা বাংলাদেশের তাঁতিরাই এই শাড়ি বুনে থাকেন।
রাজশাহী সিল্ক
বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চল সিল্ক শাড়ির জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। পেয়েছে জিআই পণ্যের স্বীকৃতি। রেশম সুতা থেকে বোনা হয় এই শাড়ি। এর উৎপত্তিস্থল রাজশাহীতেই। এই শাড়ির জন্যই রাজশাহীতে একটি সিল্ক গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে। সিল্ক কারখানাও তৈরি করা হয়। রেশম সুতা খুবই সূক্ষ্ণ, নরম, মোলায়েম ও মূল্যবান সুতা। যা দিয়েই তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্ক শাড়ি।
সিলেটের মণিপুরি
সিলেটের ঐতিহ্য মণিপুরি শাড়ি। মণিপুরিদের মৈরাংগ ফী নামের একধরনের বিশেষ ওড়না থেকে এই শাড়ির উৎপত্তি হয়। শাড়িতে টেম্পল ডিজাইন করা থাকে। একরঙা মণিপুরির শাড়িতে পারে থাকে ট্রাডিশনাল মন্দিরের নকশা। ডিজাইনের এই ভিন্নতার জন্যই মণিপুরি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বজুড়ে। বর্তমানে পাড়ের সঙ্গে মিলিয়ে জমিন ও আঁচলেও নানা নকশা। শাড়ির পাড়ের রঙ হয় গাঢ়। মণিপুরি শাড়ির তাঁতিরা সিলেটেই বাস করেন। পুরো শাড়িই মণিপুরিদের হাতে বোনা।