লোহিত সাগরের সংকটে কেন উদ্বেগ ব্যবসায়ীদের?

গোলাম রাব্বানী

জানুয়ারি ২৪, ২০২৪, ১০:০৮ এএম

লোহিত সাগরের সংকটে কেন উদ্বেগ ব্যবসায়ীদের?

লোহিত সাগর বাংলাদেশ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। কিন্তু এই লোহিত সাগরে হুতি গোষ্ঠীর জাহাজ হামলার ফলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কা খেতে যাচ্ছে। পণ্য পরিবহন খরচ ৪০ শতাংশ বেড়ে যাবার পাশাপাশি অতিরিক্ত সময় ব্যয় হবে ২২ দিন। ফলে ইউরোপে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এখন উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। ঠিক কি কারনে লোহিত সাগর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কী ফ্যাক্টর সেটা জেনে নেই।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির মূল বাজার ইউরোপ। আর এই ইউরোপে পণ্য পরিবহনে জাহাজগুলো লোহিত সাগর থেকে সুয়েজ খাল দিয়ে যাতায়াত করে। এই পথে যাতায়াতের জন্য মূলত জাহাজগুলো ইয়েমেন, সুদান,জিবুতি থেকে মিশরের সীমানা হয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে পৌছায়। এখানেই ঘটে বিপত্তি। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একের পর এক জাহাজ হামলার ঘটনায় বিশ্বের বড় বড় জাহাজ কোম্পানিগুলো বর্তমানে এ রুট পরিবর্তন করে ভিন্ন রুট ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে সময় বেশি লাগছে, বেড়ে যাচ্ছে ব্যয়ও। সঙ্গত কারণেই বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দেশের ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, সুয়েজ চ্যানেল ব্যবহার না করায় বাংলাদেশ-ইউরোপ রুটে ২২ দিন বাড়তি সময় লাগছে। যার ফলে ভাড়া বেড়েছে ৪০ শতাংশ। অতিরিক্ত সময় লাগার কারনে পণ্যবাহী বড় জাহাজের (মাদার ভেসেল) শিডিউলে বিপর্যয় ঘটছে।

লোহিত সাগর ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যকার ১২০ মাইল দীর্ঘ সুয়েজ খাল আফ্রিকাকে মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়া থেকে পৃথক করেছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ১২ শতাংশ ও কনটেইনার ট্রাফিকের প্রায় ৩০ শতাংশ এ পথ দিয়েই হয়ে থাকে। কিন্তু গত বছরের নভেম্বর থেকে এ রুটের লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে ইরান সমর্থিত হুতি গোষ্ঠী। গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ ও গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এসব হামলা চালাচ্ছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারে উদ্বেগ বাড়ছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, সুয়েজ খাল ব্যবহার করে এ অঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়। বর্তমানে ভিন্ন রুট ঘুরে আসার কারণে জাহাজের ভাড়া ও সময় বেড়ে গেছে। লোকসান কমাতে জাহাজ মালিকরা এরই মধ্যে ৪০ শতাংশ সারচার্জ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।

গত নভেম্বরে দেশ থেকে পণ্য পরিবহনে যেখানে ৬০০ ডলার খরচ হতো, সেখানে এখন ৩০০০ ডলার হয়ে গেছে।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, কনটেইনার ভাড়া ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। রপ্তানিতে খরচও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের পোশাক ক্রেতারা বিষয়টি কীভাবে নিচ্ছে সেটার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।

তবে পণ্য পরিবহনের চেয়েও বড় সংকট হতে পারে উৎস স্থানান্তর। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম জানান, এখনও এই জাহাজের রুট পরিবর্তনের প্রভাব পড়েনি। তবে আমদানি রপ্তানি ব্যয়ের ওপর প্রভাব পড়লে ক্রেতারা তখন নিকটবর্তী উৎসগুলোর দিকে ঝুঁকবে। সেক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে পড়তে পারি।

ইতোমধ্যে নাইজেরিয়া, সুদানসহ বেশ কিছু দেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে। 

Link copied!