এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ

আ. লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের নিচে রাখা হতো : ড. ফরাসউদ্দিন

এম মনিরুল আলম

জুলাই ৪, ২০২৩, ০২:৪৪ এএম

আ. লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের নিচে রাখা হতো : ড. ফরাসউদ্দিন

সংগৃহীত ছবি

দেশে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, এজন্য কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের বিকল্প নেই।

তাঁর মতে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা ছাড়া জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেবার কোনো উপায় নেই। 

তিনি বলেন, মনিটরিংয়ের অভাবে বাজারে চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে বিধায় দেশে মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে একটার পর একটা পণ্যের বাজার মূল্যে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। এতে সাধারণের বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. ফরাসউদ্দিন উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের নিচে ছিল। কারণ সেসময় বাজার মনিটরিং করা হতো কঠোরতার সাথে।

তিনি বলেন, “আমরা টীম হিসেবে কাজ করেছি। অর্থে কিবরিয়া সাহেব, বাংলাদেশ ব্যাংকে আমি ও কৃষিতে মতিয়া চৌধুরী ও সচিব শওকত আলী আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করেছি। জননেত্রী ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা সেসময় সরাসরি আমাদের তদারকি করেছেন।”

তিনি বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে ভারতসহ অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতির উত্থান হয়েছে। তবে সেসব দেশ আবার তা কমিয়ে আনতেও সক্ষম হয়েছে। অনেক দেশেই ১০, ১১, ১২ ভাগ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। সেটা ৮, ৬, ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।  

এদিকে, জুন মাস শেষে দেশে মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। গত মে মাসে মূল্যস্ফীতির এ হার ছিলো ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বিগত ১১ বছরে মূল্যস্ফীতির এ হার সর্বোচ্চ হওয়ায় সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে।

উল্লেখ্য, নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) সরকার মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছে।

এ বিষয়ে অবগত আছেন উল্লেখ করে ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৯৯৮ সালের বন্যায় ১৫ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ করে সরকার মানুষকে ৯ মাস ধরে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এবার আমাদের এখানে কার্যত কিছুই করা হয়নি। মূল্যস্ফীতি কমবে কী করে!

প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, দেশের ফাইন্যান্স সেক্টর বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতে একটা শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দরকার আছে।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, “কর ফাঁকি, মুদ্রা পাচার ও খেলাপী ঋণ একইসূত্রে গাঁথা। এজন্য সংস্কার দরকার। এটা খুব কঠিন সংস্কার।”

বাজেটে গৃহীত অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে একটি অভিজ্ঞ ও শক্তিশালী প্রুনিং বা যাচাই বাছাই কমিটি হতে পারে। এতে বাজেট পাস হয়ে যাওয়ার পর উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। সরকার নির্ভার ব্যয় পরিকল্পনা করতে পারবে। দেশের উন্নয়নও ব্যাহত হবে না। অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের কারণে মূল্যস্ফীতিও ঘটবে না।

এদিকে নতুন অর্থবছরের শুরুতেই সরকার বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে কৃচ্ছতাসাধনের যে নির্দেশ দিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন ড. ফরাসউদ্দিন।

তিনি বলেন, সরকার সাহস করে রাজনীতির বা নির্বাচনের বছরেও অর্থনৈতিক বিজ্ঞতাবশত এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমি সমর্থন করি। তবে সাথে সাথে এও বলতে চাই আমি যে এটি যেন কথার কথা না হয়। দৃঢ়তার সাথে এর বাস্তবায়নও দরকার। অতীতে এমন অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে কিন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।

তিনি বলেন, অপরিহার্য নয় এমন ব্যয় এখন করা উচিত নয়। এতে দুটি কাজ হবে। এক. রাষ্ট্রীয় অর্থের সঠিক ও প্রকৃত ব্যবহার হবে। দুই. অনিয়ন্ত্রিত ব্যয় না হলে মূল্যস্ফীতি আর বাড়বে না।

উল্লেখ্য, সরকার নতুন অর্থবছরের প্রথম দিনেই এক নির্দেশে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও আওতাধীন সব অধিদপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণ, জলযান, মোটরযান ও আকাশযান ক্রয় ও ব্যবহার বাবদ বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখতে বলেছে।

একইসাথে সরকারের পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ রাখতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কৃচ্ছতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ বরাদ্দ ব্যবহারেও।
 

Link copied!