আগামী জুলাই থেকে শুরু হওয়া পরবর্তী মূদ্রানীতিতে ঋণের সুদহার ও মার্কিন ডলারের বিনিময় মূল্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর পরামর্শের প্রতিফলন ঘটবে।
ঢাকায় আইএমএফ প্রতিনিধিদলের দুই সপ্তাহব্যাপী সফরের শেষদিন রবিবার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও আইএমএফের ঋণচুক্তির আওতায় গৃহীত যৌথ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করতে আসা সংস্থাটির স্টাফ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সাথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেজবাউল হক বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋণ পরিস্থিতি, তা আদায় ও ব্যবস্থাপনায় নেয়া কৌশল, ডলারের একাধিক বিনিময় দর রহিতকরণ ও ঋণের বিদ্যমান ৯ শতাংশ একক সুদহার উঠিয়ে বাজারভিত্তিক সুদহার নিরুপনে হালনাগাদ অগ্রগতির তথ্য আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে অবহিত করা হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশকে আইএমএফ এর অনুমোদিত ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুলাইয়ের মধ্যে একটি সুদহার করিডর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা। এই করিডর ব্যবস্থায় সুদহারের বেঁধে দেওয়া সীমা তুলে নিয়ে তা বাজারভিত্তিক করতে হবে।
গত এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভা শেষে সাংবাদদিকদের বলা হয় ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণ হবে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে। ট্রেজারি বিলের সুদহারের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করা যাবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে বানিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার ঘোষনা করবে। তবে ব্যাংকঋণের সুদের সর্বোচ্চ এ হার কত হবে তা বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি মাসে নির্ধারণ করে ঘোষণা করবে। এ হার ঠিক করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক তার নির্ধারিত সূত্র অনুসরণ করবে। নতুন এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে আগামী জুলাইয়ের এক তারিখ থেকে। এর নাম দেওয়া হয়েছে "শর্ট টার্ম মান্থলি এভারেজ রেট (স্মার্ট)। তবে এও বলা হয় যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশদ যাচাই বাছাই করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবে। এর সাথে ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার কত হবে, তাও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মাসে মাসে সমন্বয় করে নির্ধারণ করে দেয়া হবে।
মেজবাউল হক বলেন, ঋণের শর্তানুযায়ী যেসব সংস্কার কার্যক্রম চালানোর কথা সেগুলোর কিছু বিষয় জুন শেষে ও আরও কিছু সেপ্টেম্বরের মধ্যে অর্জিত হবে।
ডলারের একক বিনিময় হার চালু সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মূখপাত্র বলেন, এখন একাধিক বিনিময় হার চলছে। সেগুলোর ব্যবধান ২ শতাংশের মধ্যে এলেই বলা যাবে, মুদ্রার একক বিনিময় হার আছে। আর সেটা প্রায় অর্জিত হয়ে গেছে। জুলাইয়ে এটা ঠিক হয়ে যাবে।
এছাড়াও বিদেশে আটকে থাকা ৩০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন সম্পর্কিত বিষয়েও আলোচনা হয় দুই পক্ষের মধ্যে।
জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের পরবর্তী মাসেই ঋণের প্রথম কিস্তি বিতরণ করে আইএমএফ। আগামী অক্টোবরে দ্বীতিয় কিস্তি ছাড়ের আগে সংস্থাটি আবারো বাংলাদেশে আসবে ঋণের আওতায় গৃহীত কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে।
প্রতি ৬ মাস পরপর ঋণের এ কিস্তি ছাড় করবে আইএমএফ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত আইএমএফের এ ঋণ কর্মসূচি চালু থাকবে।