মে ১৪, ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম
“দ্রব্যমূল্য যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী ৫/৭ মাস পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। মূল্যস্ফীতি ১০ গুণ বেড়ে যাবে।” এমন আশংকার কথা ব্যক্ত করে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর সরকারকে এখনি পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে একটি 'শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্যাকেজ' তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন।
রবিবার (১৪ মে) রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ‘স্টাডি অন ডমেস্টিক রিসোর্স মবিলাইজেশন’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ পরামর্শ দেন।
বাজেট বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিগত ১৫ মাস ধরে বাংলাদেশ এক ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের সমস্যা যত দীর্ঘস্থায়ী হবে জনগণের জন্য ততই কষ্ট বাড়বে। অর্থনীতির গতিও থমকে যাবে।
তিনি বলেন, ঋণের সুদহার ঠিক করা হয় নি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি, রিজার্ভের উন্নতি নেই, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের ইনপুট আমদানি কমে গেছে উদ্বেগজনক হারে।
তিনি বলেন, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা দূরূহ হবে কারণ রাজস্ব বোর্ডের কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সক্ষমতা নেই।
তিনি বলেন, এনবিআর জানে কোথায় কী করলে রাজস্ব বেশি আদায় করা যাবে কিন্তু তারা করে না, করবেও না। তিনি বলেন, বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির কর আদায়ে অডিট করাতে হবে আন্তর্জাতিক মানের অডিট ফার্ম দিয়ে। তা না হলে গ্রামীণফোনের মতো তিক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। আর তাতে বিদেশিরা এদেশে ব্যবসা করা ও বিনিয়োগে আস্থা ও আগ্রহ হারাবে।
রিজার্ভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে ডলার বিক্রি বন্ধ করতে হবে। তা না হলে রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
এ সভায় যোগ দিয়ে আলোচনায় অংশ নেন ও গঠনমূলক মতামত দেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিয়মিত অর্থনীতি বিষয়ক সংবাদ কভার করা সাংবাদিকেরা। পিআরআই চেয়ারপার্সন ড. জায়েদী সাত্তার ও গবেষণা পরিচালক ড. এম এ রাজ্জাক অর্থনীতি নিয়ে চলমান ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও রাজস্ব আদায় সক্ষমতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের প্রক্ষেপিত জবাব দেন।
ড. রাজ্জাক বলেন, দেশের অর্থনীতি যখন স্মুদ বা সাবলীলভাবে চলমান থাকে তখন সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হয়। এতে অর্থনীতির গতি ভালো থাকে। সংকটের সময় সংস্কার করা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।
ড. জায়েদী সাত্তার বলেন, পঞ্চাশ বছর পরে বাংলদেশকে আমরা কেমন দেখতে চাই সেটা বিবেচনা করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে।
তিনি বলেন, এখন অর্থনীতির যে পরিস্থিতি তা ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক দ্রব্যমূল্যের বাজারের উর্ধ্বগতির জন্য হয়েছে। বিভিন্ন দেশ নিজেরাও এখন এক ধরনের অর্থনৈতিক স্কীম বা নীতি নিয়ে এগুচ্ছে। আমাদেরও এটা করতে হবে। তবে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এটা আমরা বলতে পারি যে পিছিয়ে নেই এখন পর্যন্ত।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. সাত্তার বলেন, এখন শর্তের দিন চলে গেছে। শর্তটর্ত কিছু না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে যেটা ঘটছে সেটা হলো পারস্পরিক বোঝাপড়া।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ডেট (বৈদেশিক ঋণ) ক্যারিং ক্যাপাসিটি ভালো। এটা আইএমএফ বুঝেছে। রিজার্ভ একটু কমবেশি থাকলো কি না তাতে কিছু আসে যায় না।