বাংলাদেশের আলোচিত ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা গ্রামীণ ব্যাংকের পাঁচ বছরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে প্রায় ৬৭ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। সংস্থাটি ইতোমধ্যে ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ না করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে রাজস্ব বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাজমুন নাহার কায়সারের নেতৃত্বে একটি দল প্রতিষ্ঠানটির ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের কার্যক্রম তদন্ত করে। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি। আইন অনুযায়ী, করযোগ্য পণ্যের সরবরাহকারী বা করযোগ্য সেবা প্রদানকারীর জন্য ভ্যাটের নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক।
গ্রামীণ ব্যাংক তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন সেবা থেকে প্রাপ্ত আয়ের বিপরীতে ৩৫ হাজার টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকার বেশি। এই অপরিশোধিত ভ্যাটের ওপর ভ্যাট আইন অনুসারে পাঁচ বছরে ২ শতাংশ হারে ১৪ কোটি টাকা সুদ। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত মেয়াদে বিভিন্ন খরচের বিপরীতে উৎসে ভ্যাট বাবদ আট কোটি ৫৪ লাখ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করেছে।
তবে তদন্ত মেয়াদে প্রতিষ্ঠানটির উৎসে কর্তন বাবদ প্রদেয় ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২৪ কোটি টাকা। এতে অপরিশোধিত ভ্যাট বাবদ ১৫ কোটি টাকা উদ্ঘাটন করা হয়। এই অপরিশোধিত ভ্যাটের ওপর ২ শতাংশ হারে সাত কোটি ২৩ লাখ টাকা সুদ দিতে হবে। এ সময়ে গ্রামীণ ব্যাংকের অপরিশোধিত মোট ভ্যাটের পরিমাণ ৪৬ কোটি টাকা। আর সুদ বাবদ ২১ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ৬৭ কোটি টাকা ভ্যাট পরিহারের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। এই টাকা সরকারি কোষাগারে রাজস্ব হিসেবে আদায়যোগ্য।
উদ্ঘাটিত রাজস্ব আদায়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন ও অনিয়মের মামলা-সংশ্নিষ্ট কাগজপত্র ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেটে পাঠানো হয়েছে।
নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের (মূল্য সংযোজন কর) মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, পরিহার করা রাজস্ব আদায়ের আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ও অনিয়মের মামলা সংশ্লিষ্ট ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট-এর কাছে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যাতে প্রতি মাসে সব আয় ও ক্রয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করে, তা মনিটরিং করার জন্যও সংশ্লিষ্ট ভ্যাট কমিশনারকে অনুরোধ কর
অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটিকে অতি দ্রুত ভ্যাট নিবন্ধন প্রদান করার জন্য এবং তাদের মাসিক রিটার্ন দাখিল নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।