ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো মূল অর্থনীতিতে সংযুক্তির আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ৬, ২০২১, ১২:০০ এএম

ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো মূল অর্থনীতিতে সংযুক্তির আহ্বান

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যে বিপুল জনবল যুক্ত হয়েছে। এগুলো মূল অর্থনীতির সাথে সংযুক্ত করে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে দেশের প্রচলিত শ্রম অধিকার আইন যুগোপযোগী করার আহ্বান করা হয়। সোমবার (৫ জুলাই) ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম : ইকোনমি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল সংলাপ যৌথভাবে আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এবং জার্মানির সমাজ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান `ফ্রিডরিচ-এবার্ট-স্টিফটুং’ এর বাংলাদেশ অফিস। সংলাপে বক্তারা রোবটিক ও ব্লকচেইন টেকনোলজি দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়ে দক্ষ জনবল তৈরির পরামর্শও রেখেছেন সরকারের কাছে।

অনলাইন শ্রমবাজারে বাংলাদেশ দ্বিতীয়

সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের শুভেচ্ছা বক্তব্যে শুরু হওয়া এই সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ সহযোগী গবেষক সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। প্রবন্ধে বলা হয় বিশ্বের ১৭ শতাংশ অনলাইন কাজ করছে বাংলাদেশের নাগরিকরা। যা দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। মূল প্রবন্ধে ডিজিটাল প্লাটফর্মের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বাজারভিত্তিক দক্ষ জনবল গড়ে তোলা, কোন কোন খাতে আর্থিক সম্ভাবনা আছে তা খুঁজে বের করা এবং ৫ বছর মেয়াদী একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট পরিকল্পনা গ্রহণ।

একইসঙ্গে ডিজিটাল বিপণনে ক্রেতা-বিক্রেতা সবার অধিকার রক্ষায় নীতিমালা গ্রহণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

দেশে সঠিক নীতিমালা নেই

সিপিডি সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গবেষক ড. মো. আসাদুজ্জামান, বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারহানা এ রহমান, রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাও এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন এম ইলিয়াস, আইফার্মার প্রধান নির্বাহী ফাহাদ ইফাজ এবং ডক্টরলা লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মো. আব্দুল মতিন ইমন বক্তব্য রাখেন।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে এগিয়ে নিতে হলে এরসঙ্গে জড়িত জনশক্তির স্বার্থ রক্ষায় শ্রম অধিকার আইনকে যুগোপযোগী করে সংশোধন করতে হবে। যাতে গতানুগতিক জনশক্তির পাশাপাশি ডিজিটাল প্লাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত জনবলের শ্রম অধিকার রক্ষা হয়।” দেশের অর্থনীতিতে ক্রমান্বয়ে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য রাজস্ব নীতিতে সমন্বয় আনার কথা বলেন তিনি।

অনলাইন থেকে দেশের প্রথাগত আয় কম

বর্তমানে হাজার হাজার যুবক আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে আসছে। কিন্তু এই অর্থ দেশে গ্রহণের সঠিক কোনো উপায় নেই। তাই শেষ পর্যন্ত এই অর্থ অপ্রদর্শিত টাকা হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। মোস্তাফিজুর বলেন, আবার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ে অনেক সময় ভোক্তাকে ঠকানো হচ্ছে। সরকার এসব নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। 

রোবটিক ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “ব্লকচেইন টেকনোলজি বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের জন্য সবচেয়ে সফল প্রযুক্তি। অথচ আমাদের দেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহারই করা হচ্ছে না।” 

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সমন্বিত অবকাঠামো তৈরির উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিবেশী ভারত এখন প্রায় ১৪৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রপ্তানি করছে। সেখানে আমাদের তো ১৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি করা উচিত। কিন্তু আম ব্যর্থ হয়েছি।”

বিনোদন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান 

আসাদুজ্জামান বলেন, বিশ্বে এখন সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে বিনোদন খাতে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের বিশাল জনশক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ নিতে হলে এ খাতের শক্তিশালী অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। 

ফারহানা এ রহমান বলেন, বাংলাদেশের বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ফ্রিল্যান্সারের দেশ। এই বিপুল সংখ্যক ফ্রিল্যান্সার বিদেশ থেকে পেইপালের মাধ্যমে অর্থ নেন। কিন্তু আমাদের দেশ এখনও পেইপাল থেকে অর্থ নেওয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন করতে পারেনি। তাই ফ্রিল্যান্সারদের বিদেশ থেকে টাকা আনতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর এই মহামারীর সময়ে সবচেয়ে উপযোগি ছিল অনলাইন ভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা ও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারত। কিন্তু আমাদের সেই অবকাঠামো এখনও গড়ে না উঠায় এই সুযোগ আমরা নিতে পারিনি।

তিনি অনলাইন ব্যবসায় ভোক্তার অধিকার রক্ষায় প্রত্যেকটা কোম্পানি ও অনলাইনে বেচাকেনায় যুক্ত সকলকে তালিকাভুক্ত করার পরামর্শ দেন। হোসাইন ইলিয়াস বলেন, বাংলাদেশে উচ্চমানের প্রোগ্রামার তৈরি করতে পারছে না। যা পারছে তাও সিস্টেম ভালো না থাকায় দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।

আব্দুল মতিন ইমন বলেন, “আমাদের দেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল প্লাটফর্মের অংশগ্রহণ কত সে হিসাবটাও সঠিক পাওয়া যায় না। তাই কী করতে হবে সে বিষয়ে সঠিক কিছু বলাও মুশকিল।

দেশের অর্থনীতিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আনুপাতিক হার বাড়ানোর জন্য তিনি একটি যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরির সুপারিশ করেন তিনি।

Link copied!